৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয়বস্তু
১৯৭১_সালের_৭_মার্চ_রেসকোর্স_ময়দানের (বর্তমান_সােহরাওয়ার্দী_উদ্যান) উত্তাল_জনসমুদ্রে_ সভামঞ্চে ‘রাজনীতির_কবি’ (নিউজউইক_ ম্যাগাজিনের_ভাষায়) বঙ্গবন্ধু_শেখ মুজিবুর_রহমান এলেন, বর্ণ-বৈষম্যবাদ_বিরােধী, আমেরিকার_কালাে মানুষের_প্রাণপ্রিয়_নেতা, বিশ্বনন্দিত_মার্টিন_লুথার কিং-এর __মতাে_তাঁর_জনগণকে_একটি_স্বপ্নের_কথা_বলতে_নয়,বরং_নির্দেশের_অপেক্ষারত_ উত্তাল_বাঙালি_জনসমুদ্রকে_স্বাধীনতার_জন্য_ সশস্ত্র_সংগ্রামের_আহ্বান_জানাতে। মাত্র ১৮ মিনিটের এক ভাষণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সংক্ষিপ্ত অথচ তেজস্বী ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনীতি ও বাঙালিদের বঞ্চনার ইতিহাস ব্যাখ্যা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ উপস্থাপন, অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত_কর্মসূচি_ঘােষণা, সারা_ বাংলায়_প্রতিরােধ_গড়ে_তােলার_নির্দেশ, প্রতিরােধ সংগ্রাম_শেষাবধি_মুক্তিযুদ্ধে_রূপ_নেয়ার_ইঙ্গিত, শত্রুর_মােকাবেলায়_গেরিলা_যুদ্ধের_কৌশল_ অবলম্বন,যে_কোনাে_উস্কানির_মুখে_সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি_বজায়_রাখার_পরামর্শ_দান_ইত্যাদি_বিষয়তুলে_ধরেন।
আরোও দেখুনঃ আশরাফ সিদ্দিকী কে জেনে নিন
আরোও দেখুনঃ 2020 সালে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার জিতেছেন কে
আরোও দেখুনঃ মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
আরোও দেখুনঃ রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী
৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয়বস্তু
রাজনৈতিক আলােচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১০ মার্চ ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়ে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণে নিম্নলিখিত শর্তগুলাে আরােপ করেন :
১. সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে;
২. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে;
৩. সেনাবাহিনী_কর্তৃক_নিরীহ ও নিরস্ত্র_লােকের_ হত্যার_তদন্ত_করতে_হবে;
৪. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের_ হাতে_ ক্ষমতা_ হস্তান্তর_ করতে হবে।
তাঁর ভাষণে আরাে বলা হলাে যে, এ চারটি শর্ত পূরণ হলে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যাবেন কিনা বিবেচনা করে দেখবেন। তিনি অসহযােগ আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য জনগণকে নির্দেশ দেন। একই জনসভায় তিনি দেশবাসীর প্রতি_ কতকগুলাে_ নির্দেশনা জারি করেন। এগুলাে হলাে :
১. বাংলার মুক্তি_ না আসা_ পর্যন্ত_ খাজনা, ট্যাক্স_ বন্ধ_ রাখতে হবে।
২. সেক্রেটারিয়েট, সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালত বন্ধ থাকবে। এর কোনাে ব্যতিক্রম হলে মাঝে মাঝে তা ঘােষণা করা হবে।
৩. যানবাহন ও বন্দরের কাজ চালু থাকবে। কিন্তু যদি জনগণকে দমনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে এমন এবং সেনাবাহিনীর চলাচলের জন্য রেল অথবা বন্দর ব্যবহার করা হয়, তাহলে রেল কর্মচারী এবং বন্দর শ্রমিকরা সহযােগিতা করবে না।
৪. বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে আমাদের বিবৃতি ও সংবাদের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করতে হবে; গণআন্দোলনের সংবাদ কিছুই গােপন করবে না। এতে বাধা দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলাের বাঙালি কর্মচারীরা কাজে যােগদান করবে না।
৫. কেবলমাত্র_স্থানীয় এবং আন্তঃজেলার মধ্যে ট্রাক, টেলিফোন_যােগাযােগ_চালু_থাকবে।
৬. স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল থাকবে।
৭. ব্যাংকসমূহ লেনদেনের জন্য প্রতিদিন মাত্র ২ ঘণ্টা কার্যরত থাকবে। কিন্তু কোনাে ব্যাংকই পশ্চিম পাকিস্তানে একটি পয়সাও পাচার করতে পারবে না।
৮. প্রতিদিন সব_ভবনে_ কালাে_পতাকা_ উত্তোলন_ করতে হবে।
৯. অন্য সব_ ক্ষেত্রে_ ধর্মঘট_ প্রত্যাহার_ করা_ হলাে; কিন্তু_ পরিস্থিতি_ বুঝে_ যে কোনাে_ মুহূর্তে পূর্ণ ধর্মঘট_ পালনের_ আহ্বান_ জানানাে হতে পারে।
১০. প্রতিটি_ইউনিয়ন_মহল্লা_থানা_মহকুমা এবং জেলায়_স্থানীয়_আওয়ামী_লীগের_নেতৃত্বে_একটি করে_সংগ্রাম_পরিষদ_গঠন_করা_হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণে উল্লিখিত শর্তগুলােকে কার্যকরী করার জন্য উদ্বেলিত ও উন্মত্ত জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”, “ রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরাে দেব, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ”। তিনি আরাে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােল, তােমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবিলা করতে হবে।”