পাকিস্তানী হানাদার কর্তৃক গণহত্যা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত বা ২৬ মার্চ রাতটি হলাে কালােরাত্রি। এই কালােরাত্রে বাঙালিদের দমন করার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর তিন ব্যাটেলিয়ান সৈন্য ‘অপারেশন সার্চলাইটে’ অংশগ্রহণ করে। রাত ১১ টার দিকে অপারেশন শুরু হয়। এই অপারেশনের অর্থ গণহত্যা ও অগ্নিসংযােগ। ঐ দিন ঢাকা শহর আক্রান্ত হয়। বিশেষ লক্ষ্য ছিল ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রদের হত্যা করে জনগন্নাথ হল, রােকেয়া হলসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবর দেয়া হয়। সেই রাতে যে ৭ জন শিক্ষক শহীদ হন তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন দার্শনিক গােবিন্দ চন্দ্র দেব। সেদিন শুধুমাত্র ঢাকা শহরে কতজনকে হত্যা করা হয়েছিল তার কোনাে সঠিক হিসাব পাওয়া যায় নি। কেননা, অনেক দেহ পুড়ে গিয়েছিল বা গণকবর দেয়া হয়েছিল। তবে সে সংখ্যা কমপক্ষে দশ হাজারের বেশি।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা শুরু হয় তা চলে স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই গণহত্যা চালানাে হয়েছিল। অনেক স্থানে একসঙ্গে অনেকগুলাে মৃতদেহ গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়েছিল যেগুলােকে আমরা গণকবর বলি। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু স্থানে মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে ফেলা রাখা হতাে। এগুলাে পরিচিত বধ্যভূমি হিসেবে। যেমন ঢাকার রায়েরবাজার বা শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে গণকবর ও বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। সংরক্ষণের অভাবে অবশ্য অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি আজ বিলুপ্ত।
আরোও দেখুনঃ গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
আরোও দেখুনঃ মহানবির (সা) রাজনৈতিক জীবন
আরোও দেখুনঃ বিপদ থেকে মুক্তি পেতে রাসূল ﷺ এর নীতিও আদর্শ
আরোও দেখুনঃ রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী
১৯৭১ সালে রাজাকার, শান্তি বাহিনী ও আলবদর বাহিনী গঠনের পর গণহত্যার কার্যক্রম আরাে পরিকল্পিতভাবে চলতে থাকে। স্থানীয় বাঙালি ও বিহারী সহযােগীরা হানাদারদের থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসতে থাকে। প্রধান
টার্গেট হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লােকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরই সূত্র ধরে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার চুকনগর গ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয় যেখানে একদিনে দশ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। চুকনগর গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার শুনতে শুনতে আবেগে আপ্লুত হয়ে দৈনিক জনকণ্ঠের রিপাের্টার ফজলুল বারী জনকণ্ঠে লিখেছিলেন-
“লাশের_পর_লাশ, মায়ের_কোলে_শিশুর_লাশ, স্বামীকে_বাঁচাতে স্ত্রী_জড়িয়ে_ধরেছিল। বাবা___ মেয়েকে_বাঁচাতে_জড়িয়ে_ধরেছিল। মুহূর্তে_সবাই___ লাশ_হয়ে_যায়। ভদ্রা_নদীর_পানিতে_বয়_রক্তের বহর, ভদ্রা_নদী_হয়ে_যায়_লাশের_নদী। কয়েক___ ঘণ্টা_পর_পাকিস্তানিদের_গুলির_মজুত_ফুরিয়ে গেলে_বেয়নেট_দিয়ে_খুঁচিয়ে_খুঁচিয়ে_হত্যা_করা_হয়।”
এই হত্যাকাণ্ড চালাবার মাঝেও হানাদাররা বহু নারীকে ধর্ষণ করে। কয়েকজনকে ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় লােকজন লাশ পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়ে। অধিকাংশ লাশই ভদ্রা নদীতে ফেলা দেয়া হয়। কিছু গণকবরে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ। কিনতু আজকাল শহীদের এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ‘গণহত্যা’ শিরােনামে ১৯৭২ সালের কিছু প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এসব প্রতিবেদনে আঞ্চলিকভাবে যে সামান্য তথ্য পাওয়া যায় তাতেই বিস্মিত হতে হয়। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ হলাে :
পাকিস্তানী হানাদার কর্তৃক গণহত্যা যে সকল ঃ
- চট্টগ্রাম ১ লাখের উপর
- চাঁদপুর ১০,০০০
- দিনাজপুর ৭৫,০০০
- নড়াইল ১০,০০০
- রংপুর ৬০,০০০
- জামালপুর ১০,০০০
- কুষ্টিয়া ৪০,০০০
- ঝালকাঠি ১০,০০০
- ঠাকুরগাঁও ৩০,০০০
- হাজিগঞ্জ ৩০,০০০
- পার্বতীপুর ১০,০০০
- সৈয়দপুর ১০,০০০
- বরিশাল শহর ২৫,০০০
- কুড়িগ্রাম ১০,০০০
- সেতাবগঞ্জ ৭,০০০
- আখাউড়া ২০,০০০
- স্বরূপকাঠি ও বানারিপাড়া ৫,০০০
- চৌদ্দগ্রাম থানা ১,০০০
- নওগাঁ ২০,০০০
- মানিকগঞ্জ ১,০০০
- কুমিল্লা ২০,০০০
এছাড়া হরিরামপুরের একটি পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল ১০,০০০ নরমুণ্ডু। কুমিল্লায় ১১ দিনে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫০০, জয়পুরহাটে একদিনে ৫০০ এর বেশি, দিনাজপুরের দু’টি গ্রামে ৩৭০০, শেরপুর জেটিতে ২০০০। যারা খবর আনা নেওয়া করতেন বা কুরিয়ার হিসেবে কাজ করতেন সেরকম ১৫০ জন গিয়েছিল বাঘের পেটে। স্বাধীনতার পর হানাদার বাহিনীর পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ৬৯ জন। নিয়াজী নিজেই মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশে হত্যা করা হয়েছিল ১৫ লাখ মানুষকে। হানাদার বাহিনীর স্বীকোরােক্তি যদি হয় ১৫ লাখ, তবে ৩০ লাখ সংখ্যাটিতাে খুব বেশি নয়।
আরোও দেখতে পারেনঃ
[★★★] খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিকার
[★★★] দুর্নীতি কী? দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার।
[★★★] জামা’আতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব
[★★★] সালাতের গুরুত্ব ও পরিত্যাগকারীর পরিণাম
[★★★] অযূ ও ফরয গোসলের নিয়ম
তথ্যসূত্র
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস – সালাম, নাসির, নজরুল