অনুভূতির অভিধান রিভিউ

অনুভূতির অভিধান বই রিভিউ-তাহসান খান

অনুভূতির অভিধান বইটির একটি আর্কষণীয় বিষয় হলো- বইটিতে ছোট ছোট কিছু অনুভূতি, একটা অনুভূতি রিলেটেড স্থিরচিত্র ও ছোট একটা কবিতার কম্বিনেশন। আরও আছে অপমান অনুভূতি নিয়ে সুক্ষ্ম বর্ণনা।

শিরোনামঃ অনুভূতির অভিধান বই রিভিউ-তাহসান খান

বই অনুভূতির অভিধান
লেখক তাহসান খান
পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২০
পাবলিকেশন অধ্যয়ন
মুদ্রিত মূল্য ২৭০ টাকা
রিভিউ লেখক রনি সরকার (হাবিপ্রবি)

📙📙📙 অনুভূতির অভিধান : প্রাথমিক কথা

কত কিছুই তাে শিখি। স্কুল কলেজে শিখি অঙ্ক, বিজ্ঞান, সাহিত্য আরাে কত কী। বাড়িতে শিখি আদব-কায়দা, রীতি-নীতি। শিক্ষকেরা শেখায় কীভাবে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে আর বাবা-মা শেখায় কীভাবে হতে হবে মানুষের মতাে মানুষ। বন্ধুরা শেখায় দুষ্টুমি আর পাড়ার বখাটে বড় ভাইটা শেখায় কীভাবে ধূম্রজালে ঠোঁট করতে হবে কালাে।

এত এত শুভাকাঙক্ষীর কেউই কিন্তু সময় নিয়ে শেখায় না কীভাবে সহ্য করতে হয় অপমান অথবা শেখায় না কখন ঈর্ষান্বিত না হয়ে হতে হবে অনুপ্রাণিত। কেউ শেখায় না কেন কৌতূহল শাস্তির পাথেয় আবার কেনইবা শাদেনফ্রয়দ এতটা সহজলভ্য। মােদ্দাকথা মনের ভেতর বিরাজমান এত এত অনুভূতির লালন পালন কীভাবে করতে হয় তা সবাই কেন যেন শেখাতে খুব উদাসীন।

তাই বেশির ভাগ মানুষই আমরা নেতিবাচক অনুভূতি গুলােকে দমন তাে দূরে থাক, পরিমিতিবােধের চোখেই দেখি না। আবার ইতিবাচক অনুভূতিগুলাের চর্চায় খুব একটা ব্যস্তও থাকি না। ফলে বাড়ন্ত কিংবা পরিণত বয়সের যেকোনাে মানুষই অনুভূতির বেড়াজালে নিজেকে ক্ষণে ক্ষণে হারিয়ে ফেলে। পরিণতি হয় নানাবিধ মানসিক ব্যাধির আধারে। কেউ চলে যায় মাদকের আখড়ায়, কেউ আত্মহত্যার উন্মাদনায় আর কেউবা নিজের অনুভূতি থেকে বাঁচতে ছুটে যায় অন্তর্জালের কোনাে এক ট্রলের পাতায়। এমন ২০ টি অনুভূতি নিয়েই চমৎকারভাবে ‘অনুভূতির অভিধান’ বইটা লেখা –
* দ্বিধা
* কৌতূহল
* বিস্ময়
* আতঙ্ক
* অহংকার
* সহমর্মিতা
* অপমান
* অনুশোচনা
* আস্থা
* অনুপ্রেরণা
* শাদেনফ্রয়দ
* অভিমান
* একঘেয়েমি
* উদ্বেগ
* বিভ্রান্তি
* মুগ্ধতা
* হতাশা
* ঈর্ষা
* সন্দেহ
* মনাকপ্সিস

📖 📖 অনুভূতির অভিধান : পাঠ পর্যালোচনা

“অপমান”- অনুভূতি নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করছি। এখানে তাহসান ভাইয়ের সাংসারিক জীবনের বিচ্ছেদ নিয়ে বলা হয়েছে। বিচ্ছেদের শুরুটা হল দোষারোপের প্রতিযোগিতা দিয়ে। দুপক্ষই নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে সচেষ্ট আর অপর পক্ষ কালিমা লেপনে ব্যস্ত। অবশেষে বিবাহ বিচ্ছেদ! আর এই খবরে পেপার পত্রিকা টিভি ও অনলাইন পোর্টালে তাকে নিয়ে বিষোদ্গারের মহোৎসব শুরু হল।
তখন প্রচন্ড মনোঃকষ্টে তিনি দিনানিপাত করতে লাগলেন। কিন্তু তিনি তার মেয়ের মা ” মিথিলা”কে নিয়ে একটা মন্তব্য পর্যন্ত করেননি। কেন?
তিনি কিছু একটা বললে হয়তো যে যার মতো লুফে নিত, যা ইচ্ছা তাই শিরোনাম করত আর তাদের মধ্যে তিক্ততা বাড়ত। সর্বোপরি, তার রাজকন্যা কোন একদিন বড় হয়ে জানবে যে তার বাবা তার সবচেয়ে আপন মানুষ নিয়ে কী বলেছিল। উনি ভেবেছিলেন, আমি হয়ত মৃত্যুকামী মানুষ নই, কিন্তু সে রকম একটা দিন এলে হয়তো বদলে যেতাম। আর সেজন্যই তার মুখ বন্ধ ছিল। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, এত বছর ধরে এত গান লিখলাম, সুর করলাম, গাইলাম। এত এত নাটক সিনেমায় অভিনয় করলাম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শিক্ষকতার পাশাপাশি এত কাজ করে মানুষের মনোরঞ্জনে এত কিছু করে এই একটা কাজই কাল হলো? মনে হল, শুধু মনে হয় একটা বিয়েই যে করেছিলাম! বাকি সব যেন সবাই ভুলেই গেল!

এই বইটিতে আর একটি আর্কষণীয় বিষয় হলো- বইটিতে ছোট ছোট কিছু অনুভূতি, একটা অনুভূতি রিলেটেড স্থিরচিত্র ও ছোট একটা কবিতার কম্বিনেশন। অপমান অনুভূতি নিয়ে লেখক তাহসান এর লেখা ছোট্ট একটি কবিতা-
” কারো মুখে কালিমা লেপনে
ব্যস্ত নির্বিচারে-
বৈরী সত্তা কাঁদে হাসে
প্রাক্তনের অবিচারে!

কষ্ট যখন আমার একার
কাঠগড়ায় আসামি আমি-
হলুদ সংবাদের পাতায় মোড়া
অনাকাঙ্ক্ষিত আগামী

মুখ বুজে সহ্য করি
অপমানের ঝড়
আমার হতাশার নেই কোনো সঙ্গী
কোথায় আমার ঘর

আত্মহত্যা মহাপাপ
তাই ধৈর্য আমার শক্তি
পরজীবী কীটেরা সর্বদা বৈরী
বিষোদ্গারেই যেন ভক্তি

মুখোশগুলো খুলে পড়েছে
মুষড়ে পড়িনি বিচ্ছেদে
দোষারোপের প্রতিযোগিতায়
ক্ষমা এখনো আমার প্রচ্ছদে!”

অপমান অনুভূতি আসলে এটাই যারা আপনাকে কুটুক্তি করার অধিকারটুকু রাখে না, তারা যখন আপনার খারাপ সময়ে হেয় প্রতিপন্ন করবে, ঘৃণা করবে, কুৎসা রটে বেড়াবে সেটাই মূলত “-অপমান”- এখন আসা যাক,”আতঙ্ক অনুভূতির”- পৃষ্ঠায়;

এখানে লেখক তাহসান খুব সূক্ষ্মভাবে ভয় আর আতঙ্ক এর মধ্যে তফাৎটা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একবার তিনি তার দলবল নিয়ে চট্টগ্রামে ব্রান্ড পার্টিতে গেলেন। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর পেমেন্ট নিয়ে ঝামেলা বাঁধল। ফলে, অনুষ্ঠান কিছু সময়ের জন্য থমকে গেল। উনার বন্ধু টনি গিয়ে কতৃপক্ষকে বলল, পেমেন্ট এখন না দিলে কিবোর্ডে হাত পড়বে না, দুভার্গ্যবশত, কিবোর্ট প্লেয়ারের দায়িত্বে ছিলেন তাহসান ভাই।

যাইহোক, পেমেন্ট ছাড়াই প্রোগ্রাম শুরু হল। প্রোগ্রাম শেষে ঢাকায় ফিরতে গিয়ে বাধল ঝামেলা। তাহসান ভাই টিকিট নিতে গেলেন রাত ১১ টায়। তখনই কাউন্টারের সামনে কিছু সন্ত্রাসী তার গতিপথ রোধ করল। সেই সন্ত্রাসীরাই তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলেন। তারা পরিচয় দিলেন তারা চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ব্যবসায়ী। ওদের সাথে কথা বলে তাহসান ভাই বুঝতে পারলেন যে, বিষয়টির সূত্রপাত টনি ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষিপ্র আলাপচারিতা। পরে সন্ত্রাসীরা তাকে বলল যে, সে নাকি বলেছে পেমেন্ট ছাড়া সে কিবোর্ড প্লায়ারে হাত দিবে না। তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পৃথিবীতে বেচেঁ থাকার যে নির্মল সত্যতা এটাই হল মূলত আতঙ্ক। এই টপিকের শেষে তাহসান ভাই বলেছেন,”সেদিন বুঝেছিলাম পৃথিবীতে দুধরনের মানুষ। একদল বন্দুক চালাতে জানে অথবা বন্দুক চালানোর মানুষ কাছে রাখে, আরেক দল বন্দুক কী তাই জানে না। আমি বন্দুক চালাতে এখনো পারি না। কিন্তু বন্দুক চালাতে কোনো ভয় পাই না !!!”
এটাই হল ভয় আর আতঙ্ক অনুভূতির পার্থক্য।

এবার আসি ” শাদেনফ্রয়দ”- অনুভূতির কাছে; এর অর্থ হল ক্ষতির আনন্দ। অন্য কারো ক্ষতি সাধন হতে দেখে যদি মনের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি জেগে ওঠে তখন সেই অনুভূতির নাম শাদেনফ্রয়দ। এই অনুভূতি থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হল,আমরা কীভাবে এই পরাশ্রীকাতরতাকে কন্ট্রোল করতে পারি এবং আমরা কিভাবে অতিমানবিক হতে পারি।

★★★ ব্যক্তিগত মূল্যায়ন
বইটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। বইটি পড়লে অত্যন্ত ১০ মিনিট হলেও নিজের লাইফকে নিয়ে ভাবতে বসবেন এবং বেলা শেষে উপলব্ধি করবেন এই যে অনিশ্চিত জীবনই আমাদের দিয়েছে জীবনের যত দুর্মূল্য অর্জন!!

অনুভূতির অভিধান বই ডাউনলোড

এই বইটি ডাউনলোড করতে নিচের লিঙ্ক ক্লিক করে তারপর ডাউনলোড করে নিন।

অনুভূতির অভিধান বই

 

আরও পিডিএফ ডাউনলোড করুণ 

People also search: অনুভূতির অভিধান বই রিভিউ । অনুভূতির অভিধান বই ডাউনলোড কিভাবে করবেন । অনুভূতির অভিধান pdf . অনুভূতির অভিধান বই রিভিউ দেখুন।