পিএইচডির গল্প'পিএইচডির গল্প'

📙 পিএইচডির গল্প : আসিফ নজরুল

 

। বইটিতে পুরান ঢাকার একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করা এক শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিলাতে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বাঁধা সমূহ এবং উত্তরণের বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে।

📙 পিএইচডির গল্প : আসিফ নজরুল
বইয়ের নাম পিএইচডির গল্প
লেখক আসিফ নজরুল
প্রকাশ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
প্রকাশক বাতিঘর
প্রচ্ছদ সব্যসাচী হাজরা
বইয়ের ধরন আত্মজীবনী
পৃষ্ঠা ১২০
মূল্য ২৫০৳
রিভিউ লেখক মনসুরা শরীফ

 

‘পিএইচডির গল্প’ বইটি সম্পর্কে লেখকের মন্তব্যঃ

‘আমার জীবন ঘটনাবহুল। কিন্তু তার কিছুই পিএইচডির দিনগুলোর সঙ্গে তুলনীয় নয়। এই দিনগুলোর গল্প হতাশায় নিমজ্জিত এক তরুনের রুখে দাঁড়ানোর। এই গল্প ব্যক্তিজীবনের অকল্পনীয় টানাপোড়েনেরও। আমার সেই আশ্চর্য দিনগুলোর সঙ্গী ছিল দেশি-বিদেশি বহু মানুষ। অবহেলায়, উসকানিতে, মমতায় আত্মত্যাগে। তাদের সবার জন্য ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা।’

🔷🔷’পিএইচডির গল্প’ বইটির অধ্যায়/পর্ব বিন্যাসঃ

বইটি লেখক আসিফ নজরুলের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ। ১২০ পৃষ্ঠার এ বইতে প্রথম ৭০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ব্যক্তিগত জীবনালাপ,পরবর্তী ৫০ পৃষ্ঠায় একাডেমির ডিগ্রি অর্জনের অভিজ্ঞতা বিবৃত হয়েছে। পিএইচডির গল্প মোট ৭টি পর্বে বিন্যস্ত —

আপনার জন্যেঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী

১.রোড টু লন্ডনঃ

লেখকের প্রাথমিক পরিচয়, বেড়ে ওঠার গল্প, পরিবারের পরিচয় ও তাদের মানসিকতা, মধ্যবিত্ত পরিবারে জীবনের নানা রং স্বপ্ন, সাফল্য, ছোট বোন হারানোর বেদনা, ১ম প্রেম শেরীর মৃত্যু , লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনা,ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ৩৬ দিনের অভিজ্ঞতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ১ম শিক্ষক ও ৯ দিনের স্মৃতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনায় যোগদান, পিএইচডি করার জন্য প্রস্তুতি পর্ব, নানান স্মৃতিকাতর বিষয় এ পর্বে জানা যায়।

২.লন্ডন হাউজঃ

লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা, সাধের (মুহাম্মদ আবদুল হাইয়ের “বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন”পড়ে লেখকের মন হলো এক রূপকথার রাজ্য) দেশে পদার্পণ, ভিন্ন এক অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা, শুভাকাঙ্ক্ষী ধরণের মানুষের আলাপ,গুডএনাফ /লন্ডন হাউজ ছাত্রাবাসের দিনগুলো, ক্রমাগত কঠিন দিনের পথে, সংগ্রামী হওয়ার গল্প।

৩.রিজাওয়ানের বেবিসিটার,ড্যারেলের শিক্ষকঃ

কিভাবে লন্ডনে দিন চলছিলো তার চিত্র পাওয়া যায় এখানে, বিভিন্ন সাময়িক কাজ করার ঘটনা, বাংলা শিখানোর অভিজ্ঞতা, প্রবাসী জীবনের তিক্ত কাহিনি,পিএইচডি করার ক্ষেত্রে টানাপোড়ন, শংঙ্কা, কিছু মজার মানুষ ও তাদের সঙ্গ।

৪.পিএইচডি:সূচনা পর্বঃ

এ পর্বে পিএইচডি করার তিক্ত অভিজ্ঞতা, কষ্টের স্তর বিন্যাস, সফলতা আর বর্থ্যতার দোদুল্যমান অবস্থা, ফিলিপ স্যান্ডেস (সুপারভাইজার-মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসূমা নিয়ে মামলায় বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মামলায়ও অভিযোগকারীর পক্ষের আইনজীবী,তাছাড়াও কয়েকটি বিখ্যাত বইয়ের লেখক) এর অধীনে সংকটাপন্ন দূরাবস্থা, ভিভির মতো কিছু মানুষের আলাপ,পিএইচডি করার এপিঠ ওপিঠ, এক পর্যায়ে চরম হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার গল্প, বারবার থুবড়ে পড়ে আবার ওঠার গল্প।

৫.পিএইচডি:মেহনতিপর্বঃ

পিএইচডির প্রকার(লেখকের পরিচিত একজন শিক্ষকের নিজস্ব মত যদিও বাস্তব),নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবার উদ্যোমতা, বিয়ের ঘটনা, জীবনের নতুন সন্ধিক্ষণ,

৬.পিএইচডি:মরিয়াপর্বঃ

নানা চড়াই-উৎরাই শেষে পিএইচডি করার পূর্ণতার পথের সূচনা, একই সাথে কষ্টের সর্বোচ্চ ধাপে জীবনের নানা টানাপোড়নের দিনগুলোর সাক্ষী সেন্ট্রাল লন্ডনের ৮ গুজ প্যালেসের বাসা,চরম মানসিক অস্থিরতা প্রশমিত করতে তাবলীগে যাওয়া, পিএইচডির কঠিনতম তস্তরের মুখোমুখি।

আরও পড়ুনঃ দেশে বিদেশে সৈয়দ মুজতবা আলী রিভিউ

৭.ফিলিপের লাঞ্চঃ

পর্বের নাম থেকেই সাফলতার সুবাস পাওয়া যায়, ফিলিপের মতো রসকষহীন রুষ্ট মানুষের লাঞ্চ করানো থেকে। ২৬ মে,১৯৯৯ ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘদিনের পাথুরে পথ পাড়ি দিয়ে চূড়ান্ত মঞ্জিলে পৌঁছানোর গল্প -লেখকের ভাষায়,”দৌড় দেই পেভমেন্ট ধরে। রাসেল স্কোয়ারের কোনায় পে-ফোনের বুথ। রিং বাজামাত্র আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠি।হয়ে গেছে আম্মা!হয়ে গেছে! আমার স্ত্রী কে জানাই।”

 

🔷🔷🔷 ‘পিএইচডির গল্প’ র কাহিনী সংক্ষেপঃ

পুরান ঢাকার এক রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে। পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকবছর পর যখন মেয়েটির বিয়ে ঠিক করা হয় ধনী পরিবারে তারই বড় বোনের স্বামীর ছোট ভাইয়ের সাথে। শিক্ষানুরাগী মেয়েটি আশ্চর্য প্রতিজ্ঞা করেন,তিনি শিক্ষিত ছেলে ছাড়া বিয়ে করবেন না। হলও তাই, শেষ পর্যন্ত তার পরিবার মেনে নেয় তার জেদ এবং তার বিয়ে হয় হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের শিক্ষিত ছেলে মো.নূরুল ইসলাম এর সাথে। এই দম্পতির ৬ ছেলেমেয়ের মেজো ছেলে মো. নজরুল ইসলাম।

প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বাবা,চাকরি করতেন বাংলাদেশ বেতারের প্রকৌশলী হিসেবে। তিনি তার ছেলেদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছেন তাদের জন্মের সময়ই। বড় ছেলে ডাক্তার, মেজো ছেলে লইয়ার আর ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। মেজো ছেলে হওয়ায় নজরুল ইসলাম এর কপালে পড়েছিল আইনজীবী হওয়া। পরিবারের ভীতু, অন্তর্মুখী, নির্বিরোধী, অনুজ্জ্বল এই মেজো ছেলেটির জীবনের লক্ষ্য ছিল একটাই, ভালো রেজাল্ট করা। কারণ তা ছাড়া তার স্কুলে এবং বড় ভাইয়ের কাছে মার খাওয়ার ভয় ছিল। এই ছেলেটিই মানবিক থেকে ডাবল স্ট্যান্ড করে এসএসসি পাস করে এবং ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়। নবম শ্রেনী থেকে ছেলেটি স্বনির্ভর হয়ে যায়, টিউশনি শুরু করে এবং তারপর থেকে বাড়ি থেকে কখনও টাকা নেয়নি।

এরপর ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি নিয়ে এইচএসসি পাস করে বাবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। আইন পড়তে বিরক্ত লাগায় লেখালেখিতে মনযোগী হন, পত্রিকায় কলাম,প্রতিবেদন লেখা শুরু করেন।এরমাঝে তার জীবনে নতুন মোড় নেয়,প্রেমে পড়েন বান্ধবী শেরীর। কিন্তু ২য় বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে যায় লেখকের জীবনে। আদরের ছোট বোনকে হারানোর পরের বছরই প্রেমিকা শেরীও সপরিবারে সকড় দুর্ঘটনায় মারা যায়। এলোমেলো জীবনে পরিবারের কথা মনে করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করেন এরপর।
ফার্স্ট ক্লাস নম্বরের এক নম্বর কমে এলএলবি পাস করেন এবং সাংবাদিক হিসেবে জীবন শুরু করেন। তখন তিনি মো.নজরুল ইসলাম থেকে আসিফ নজরুল নামে পরিচিতি লাভ করেন।

এরপর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন এবং প্রশাসনে দ্বিতীয় হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হোন এবং ৩৬ দিন চাকরির পর পদত্যাগ করেন। এরপর চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে ৯ দিন চাকরি করেন এবং এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
এখানে শিক্ষক হওয়ায় লন্ডলে যান পিএইচডি করতে। কিন্তু দেশে থাকাকালে সময়ে লন্ডন সম্পর্কে যত চিন্তা ভাবনা করেন,কিন্তু বিদেশে তার সব চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন হতে শুরু করে। বাস্তবতা সুখময় ছিল না তার জন্য। কিন্তু বিদেশেও তার সাহায্যকারী,শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তার ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বড় ভাই, ছোট ভাই সহ আর অনেকেই।

পিএইচডি অর্জন তার জন্য সহজ বিষয় ছিল না। এরজন্য অপমানিত হয়েছেন তার সুপারভাইজার এর কাছে। তাছাড়া জীবিকার প্রযোজনে না ঠিক শখের বশেই বিভিন্ন কাজ করছেন বিদেশের মাটিতে, যেগুলোতে তিনি অর্জন করেছেন সব করুন অভিজ্ঞতা। এরমাঝেই তার জীবনের নতুন মোড় নেয়,বিয়ে করেন তার এক ছাত্রীকে। কিন্তু সে বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ ঘটে।
পিএইচডি অর্জনের জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম, অধ্যবসায়,জেদ এককথায় অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে নিজের সাথেই এবং শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করেছেন।

❤ভাবনার জগৎ স্পর্শ করা কিছু উক্তিঃ

**সে আমাকে তেমন সাহায্য করেনি বলে দুঃখ ছিল, এখন এই পরিনিত বয়সে মনে হয়, সাহায্য না করে ভালো করেছে। না হলে এতো টা জেদ আসত না আমার, এত কষ্ট করতে পারতাম না। ( ফিলিপ সম্পর্কে লেখকের উক্তি)

**ঘুম তাড়াতে কফি খেতাম খুব।কফির টাকায় টান পড়লে ঘুম তাড়াতে নিজেকে আঘাত করতাম। কত রাত আঙুলের লখে ক্লিপ চেপে রাখতাম। পরদিন সে আঙুল আর নাড়াতে পারতাম না ব্যথায়।(লেখকের কষ্ট আর সংগ্রামের তীব্রতার চিত্র)

**আমার ভেতর ইস্পাতকঠিন একটা মানুষ জেগে ওঠে এ সময়ে।………….
সে আমাকে বলে, ট্রাই ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট। তারপর যা হওয়ার হবে। তোমার যেন দুঃখ না থাকে যে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করোনি।

📖 ‘পিএইচডির গল্প’ বইটি পড়লে জানা যাবেঃ

বইটি পড়ার মাধ্যমে অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন, পরিস্থিতির সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তনের চিত্র, কোন কিছু অর্জনে কতটা ত্যাগ করতে হয়।
পড়া শেষে, আপনার স্বপ্ন নিয়ে কিছু টা হলেও ভাবতে শেখাবে, জীবনকে ভিন্ন ভাবে দেখার সুযোগ হবে হয়ত আরেকবার।

★’পিএইচডির গল্প’ বইটি পাঠের অনুভুতিঃ

বইটি পড়তে এমন হবে যে একটি লাইনে হাসবেন, কিন্তু পরের লাইনেই আবার কাঁদবেন। ‘পিএইচডির গল্প’ হাস্যরসাত্মক,করুন এবং বিমোহিত হওয়ার কাহিনি। একই সাথে রয়েছে সফলতার সংগ্রামে লড়াকু সৈনিক হওয়ার শিক্ষা। এককথায় অসাধারণ সুন্দর একটি বই। খুব কাছে থেকে একজনের জীবনকে পাঠ করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শিক্ষা আমাদের মাঝে পুঞ্জীভূত হয় যা আমাদের বহুদূর যেতে অর্থাৎ জীবনে সফল হওয়ার প্রেরণা জোগায়।

🔷🔷বই টি কেন পড়বেন

কোন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কি কি অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে সে ব্যাপারে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। “পড়তে পড়তে প্রায় পাগলের দশা হলো আমার সপ্তার পর সপ্তা ঘরে থাকতাম বন্দী থাকতাম খাওয়ার কথা ভুলে যেতাম কখনো কখনো” এমন অধ্যবসায় ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত করবে। বইটি, করুন হাস্যরসাত্মক এবং বিমোহিত হওয়ার একটি কাহিনি। একজনের গল্পের ছলে কারো না কারো জীবনের ছবি লুকিয়ে আছে এখানে।

পিএইচডির গল্প : আসিফ নজরুল boi pdf। পিএইচডির গল্প বই অরজিনাল লিঙ্ক ডাউনলোড