ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে কি খাবেন – নিগার সুলতানা রিপা
প্রত্যেক মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় ক্ষয়ের সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের শরীরে যে হাড় তৈরি হয়, তার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয় ২০-৩০ বছর পর্যন্ত। বয়স বাড়ছে মানেই হাড়ে ক্ষয়। চল্লিশের পর থেকেই শরীরে দেখা দেয় ক্যালসিয়ামের অভাব। আর ক্যালসিয়ামের অভাব মানেই হাড়ের সমস্যা। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে এবং আপনার শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পুরনে সাদা তিল হতে পারে এক মহাঔষধ।
আরও পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণ
ক্যালসিয়াম এমন এক ধরনের খনিজ যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। ক্যালসিয়াম শরীরের অন্যান্য কার্যক্রমেও সহায়তা করে। যেমন- পেশী ও ধমনীর সংকোচন, স্নায়ুতন্ত্রের বার্তা সরবরাহ ইত্যাদি। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন অঙ্গেও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি থাকলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যার মধ্যে অন্যতম হলো অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওপেনিয়া। অস্টিওপরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অস্টিওপেনিয়া এমন একটি অবস্থা যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কম হয়, যার ফলে হাড় স্বাভাবিকের তুলনায় দুর্বল হয়। অস্টিওপেনিয়া অস্টিওপরোসিসের বৃদ্ধি করে এবং হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও ক্যালসিয়ামের অভাবে দেখা দেওয়া বিভিন্ন লক্ষণগুলো হলো হাত ও পায়ে ঝিঝি ধরা, অবশ হওয়া, ব্যথা, ক্লান্তি, হতাশা, দাঁতের ক্ষয়, পেশীতে ব্যথা ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের বিকাশও রোধ হয়।
ক্যালসিয়াম জনিত এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে সাদা তিল।
বেশিরভাগ মানুষই তিলের নাড়ু খেতে পছন্দ করেন কিন্তু সেই তিলেরও যে এত গুণ থাকতে পারে তা জানলে সত্যি সত্যি অবাক হতে হয়। সাদা তিলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে , যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন দরকারি ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ করে। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় সাদা তিল থাকলে আমরা বিশেষ কিছু উপকার পায় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
প্রতি 400 গ্রাম সাদা তিলের মধ্যে প্রায় 200 গ্রাম ফাইটোস্টেরল থাকে। এটি প্রোস্টেট গ্রন্থির স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপকেও স্বাভাবিক করে। হাইপারসেন্সিটিভ ডায়াবেটিস রোগীদের প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাদা তিল কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে ডিএনএ-কে রক্ষা করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সাদা তিলের। প্রতিদিনের খাবারে এই উপকরণটি ব্যবহার করলে শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই যাদের কেমোথেরাপি নিতে হয় তাদের খাদ্যতালিকায় এই সাদা তিল রাখা খুব প্রয়োজনীয়।
সাদা তিলের উচ্চ ফাইবার উপাদানগুলি অন্ত্রের মসৃণ ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে, যা পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফলমূল ও শাকসবজির সাথে সাদা তিল মিশিয়ে খেলে আপনার হজম সিস্টেম সঠিক কার্যক্ষমতায় থাকবে। তিল ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস, জিঙ্কের পাশে এমন একটি খনিজ যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। সাদা তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড় মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা কমায়।
জিঙ্ক হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। এই খনিজের অভাব অস্টিওপরোসিসের কারণ হতে পারে। সাদা তিলে রয়েছে কপার বা তামা যা গাঁটের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, মাসল পেইন বা বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী।
★★★ জেনে নিন সাদা তিল কিভাবে খাবেন
প্রতিদিন এক চা চামচ সাদা তিল অল্প অল্প করে মুখে দিয়ে মিহি করে চিবিয়ে খাবেন। এই ভাবে তিল চিবিয়ে খাওয়া হয়ে গেলে কুসুম গরম এক গ্লাস পানি খেতে হবে। এভাবে টানা সাতদিন আপনি তিল খাবেন। তারপর ১ মাস বিরতি দিয়ে আবার খেতে পারবেন। এই তিল আপনি কাঁচাই খেতে পারবেন ভেজে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা চিবিয়ে খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না তারা ১ চা চামচ তিল গুড়ো করে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। তিল খাওয়ার সঠিক পরিমান হল এক চা চামচ। এক চামচের বেশি তিল খাবেন না। কারন এক চামচ সাদা তিলে ৮৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে যা আমাদের দৈনিক শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত।
আরও দেখুনঃ মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
🔷🔷🔷 সতর্কতা
নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে তিল খেলে অনিবার্যভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেবে।
তিল একটি মোটামুটি উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার। একারণে সাদা তিল যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে এটি আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে। অ্যালার্জি হলো তিল খাওয়ার আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আপনি যদি তিল বীজের প্রতি সংবেদনশীল হন তবে খাবারের অ্যালার্জি এড়াতে এটি ব্যবহার করবেন না। এছাড়া অতিরিক্ত তিল খেলে ডায়রিয়া, পেট ফাপাসহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন ।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে কি খাবেন -ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এই নিয়ে একটু সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হয়ছে। আশা করি ভালো লাগবে।।
আরও পড়ুনঃ ওমিক্রণ ভাইরাস কি এবং ওমিক্রণের লক্ষণ