বিপদ থেকে মুক্তি পেতে রাসূল ﷺ এর নীতিও আদর্শ

বিপদ মুসিবত উত্তরণে রাসূল ﷺ এর নীতিও আদর্শ

বিপদ থেকে মুক্তি লাভের উপায় রালসূ (সা) বলে গেছেন কিভাবে বিপদ থেকে মুক্তি থাকা জায় তো চলুন দেখি আসি কি বলছেন  রালসূ (সা)

১. আল্লাহর উপর নির্ভরশীলঃ

নবুয়াতের সপ্তমবর্ষ থেকে দশম বর্ষে র সূচনা পর্যন্ত তিন বছর তারা বন্দী থাকেন। এই তিন বছরের নিপীড়নের ফলে এ বছরই অর্থাৎ নবুয়াতের দশম বছরেই ইহকাল ত্যাগ করেন রাসূল ﷺ এর অভিভাবক চাচা আবূ তালিব এবং প্রেরণাদায়িনী স্ত্রী খাদিজা তাহেরা (রাঃ)। ফলে তখন থেকে রাসূল ﷺ নিরংকুশভাবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে যান।

২. সবর অবলম্বন করাঃ

উমরের (রাঃ) ইসলাম কবুল গ্রহণের ফলে মুসলমানরা কা’বার চত্বরে প্রকাশ্যভাবে সালাত আদায় করতে শুরু করে। এতে বেশ হাঙ্গামা হয়।আবূ তালেব দেখলেন যে,কুরাইশগণ সার্বিকভাবে সকলক্ষেত্রে তার ভ্রাতুষ্পুত্রের বিরোধীতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং অঙ্গিকার ভঙ্গ করা, তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে হত্যা করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়েছে।

চুক্তিতে স্থির হলো যে, বনু হাশেম, মুত্তালিবকে যতক্ষণ মুহাম্মদকে ﷺ আমাদের হাতে সমর্পন না করবে এবং তাকে হত্যা করার অধিকার না দেবে ততক্ষণ কেউ তাদের সাথে আত্মীয়তা রাখবেনা, বিয়েশাদীর সর্ম্পক

পাতাবে না, লেনদেনও মেলামেশা করবেনা এবং কোন খাদ্যও পানীয় দ্রব্য তাদের কাছে পৌঁছাতে দেবেনা। তারা গাছের পাতা পযর্ন্ত চিবিয়ে এবং শুকনো চামড়া সিদ্ধ করে ও আগুনে ভেজে খেত।তিন বছর পর আল্লাহ এই

বন্দীদশা থেকে তাঁদের মুক্তির পথ করে দেন। বনু হাশিম খান্দানের এই নিদারুণ কষ্ট দেখে একদল যুবকের মন বিগলিত হয়। তারা অস্ত্র সজ্জিত হয়ে আবূ জেহেলের নিষেধ অমান্য করে বনু হাশিমকে মুক্ত করে আনে। এমন চরম বিপদের দিনে তিনি তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে মোকাবেলা করেছেন।

৩.বিপদ থেকে মুক্তি পরামর্শ গ্রহণঃ

মক্কার কাফের ও মদীনার মুসলমানদের মধ্যে তৃতীয় ও চূড়ান্ত নিস্পত্তিকারক যুদ্ধ হচ্ছে পরিখার যুদ্ধ। উহুদ যুদ্ধের দু’বছর পর মক্কার কাফেররা আবার যুদ্ধের জন্য এগোয়। তাদের সঙ্গে ছিল দশহাজার সৈন্যের বিশাল

বহর।ও ভাড়াটে সৈন্যও ছিল। রাসূল ﷺ তখন দুমাতুল জান্দাল সফরে ছিলেন সংবাদপ্রাপ্ত হওয়ামাত্রই রাসূল ﷺ নেতৃস্থানীয় সাহাবায়গণের পরামর্শ সভা আহবান করেন এবং প্রতিরোধকল্পে পরিকল্পনার ব্যাপারে সলাপরামর্শ

করেন। সালমান ফারসী নামক জনৈক পারস্যবাসী মুসলমান নগরের চারিপাশে গভীর পরিখা খনন করার পরামর্শ দিলেন। সর্ব সম্মতিক্রমে সালমান ফারসীর প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এই পরিকল্পনা হযরতের ﷺ খুব পছন্দ হলো। প্রস্তাবটি ছিল অত্যন্ত হেকমতপূর্ণ ও সম্ভবনাময়।

৪. বিপদ উত্তরণে সাহসিকতা প্রদর্শনঃ

রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পঁয়ত্রিশ বছরে পদার্পণ করেন তখন কুরাইশগণ কা’বা গৃহের পুনঃনির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। কারণ কা’বা গৃহের স্থানটি চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় ছিল মাত্র। নতুন ইমারত তৈরীর

জন্য পুরাতন ইমারত ভেঙ্গে ফেলা প্রয়োজন। কা’বা সর্ম্পকে তাদের ভক্তি মিশ্রিত একটা ভয় ছিলো এবং এ জন্য তারা এর ওপর হাত রাখতে ভয় পাচ্ছিল। অবশেষে ওয়ালীদ বিন মুগীরা মাখযুমী সর্বপ্রথম ভাঙ্গার কাজে হাত দিলেন। বাকুম নামক একজন রুমীয় মিস্ত্রীর তত্ত্ববধানে নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছিল। প্রত্যেক গোত্র আলাদাভাবে পাথর সংগ্রহ করলো এবং পুনঃনিমার্ণের কাজ সমাধা করলো। হাজরে আসওয়াদের স্থান পযর্ন্ত

দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হলে এবার তা যথাস্থানে কে স্থাপন করবে তা নিয়ে ঝগড়া বিবাদ শুরু হলো। কেউই সামান্য ছাড় দিতেও তৈরী নন। সকলেরই একই কথা, একই জেদ। এ নিয়ে গোত্রগুলো সংঘবদ্ধ হতে লাগলো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। এ বিভীষিকাময় এক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বর্ষীয়ান নেতা আবূ উমাইয়া

মাখযুমী এ সমস্যা সমাধানের একটি সুত্র খুঁজে পেলেন। যেই ব্যক্তি সবার আগে কা’বা প্রাঙ্গনে পৌঁছাবে তার উপর এই বিরোধ মীমাংসার ভার দেয়া হবে। অতঃপর দেখা গেল সকলের আগে বীরপদে এগিয়ে আসলেন এক

যুবক। আরববাসীর প্রিয় পাত্র ও শ্রদ্ধেয় আল আমীনই সর্ব প্রথম মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেছেন। তখন তিনি চাদর আনার নির্দেশ দেন। চাদর এনে বিছানো হলো। মুহাম্মদ ﷺ নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ তুলে চাদরের

মাঝখানে রাখলেন। হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করতে ইচ্ছুক প্রত্যেক খান্দানের এক একজন প্রতিনিধিকে চাদর ধরে উপরে তুলতে বললেন। মুহাম্মদ ﷺ চাদর থেকে পাথরটি তুলে যথাস্থানে বসিয়ে দিলেন। অত্যন্ত সহজ, সুশৃঙ্খল এবং সঙ্গত পন্থায় জলন্ত একটি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।সবাই খুশী। এড়ানো গেল একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

৫. বিপদ উত্তরণে দু’আ করা এবং অনুকম্পা প্রদর্শনঃ

আল্লাহর রাসূল ﷺ সিদ্ধান্ত নেন, তায়েফ গিয়ে ইসলাম প্রচার করবেন। নবী ﷺ তাদের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানান। তাঁর কথায় তারা কান দিল না। বিদ্রুপ করে গুন্ডা লেলিয়ে দিল।পাষান্ডরা হযরতের ﷺ অঙ্গে প্রস্তর নিক্ষেপ করতেও ছাড়ল না। প্রস্তরাঘাতে হযরতের ﷺ দেহ জর্জরিত হতে লাগল। হযরত ﷺ ক্রমশ

অবসন্ন হয়েও অচৈত্য হয়ে পড়তে লাগলেন। চেতনা ফিরে আসলে সর্ব প্রথমে তার মনে পড়ল নামায পড়বার

কথা। এখানে দু রাকাআত নামায পড়ে তাদের জন্য তিনি মর্মস্পর্শী দোয়া করলেন। এরপর পবর্তের ফেরেস্তারা আমাকে সালাম জানিয়ে বললেন- হে মুহাম্মদ ! কথা এটাই, আপনি যদি চান যে এদেরকে আমি দু’পাহাড়

একত্রিত করে পিষে মারি তাহলে তাই হবে। নবী বললেন- না, বরং আমার আশা, মহান আল্লাহ এদেরকে পৃষ্ঠদেশ হতে এমন বংশধর সৃষ্টি করবেন, যারা একমাত্র ইবাদাত করবে এবং অন্য কাউকেও তার অংশীদার ভাববে না। এভাবেই রাসূল ﷺ বিপদে পতিত হয়ে জুলুমকারীদের জন্য বদ দোআ না করে তাদের জন্য দুআ এবং অনুকম্পা প্রদর্শন করেন।

৬. বিপদ উত্তরণে সালাত আদায়ঃ

হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা) নাখল নামক স্থান থেকে যাতুর রিকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গাতফান গোত্রের একটি দলের সম্মুখীন হন। কিন্তু সেখানে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। উভয়

পক্ষ পরষ্পর ভীতি প্রদর্শন করেছিল মাত্র। তখন নবী (সা) দু’রাকাত সালাতুল খাওফ আদায় করেন। ইয়াযীদ (র) সালামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি নবী (সা)-এর সংগে যুকারাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।

৭. বিপদ থেকে মুক্তি ভারসাম্য থাকাঃ

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন- আমি রাসূল ﷺ এর পুত্র ইব্রাহীম (রাঃ)কে তাঁর মৃত্যুর সময় দেখতে গেলাম। নবী তাঁকে এতটাই ভালবাসতেন যে সে মুহুর্তেই তিনি ছুটে আসেন এবং তাকে ডাক দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেন।

তারপর আমি ইব্রাহীমকে নবীর ﷺ কোলে এমনতাবস্থায় দেখলাম যখন তিনি জীবনের অন্তিম মুহুর্ত জনিত অতিক্রম করছিলেন। এ সময় নবী ﷺ এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুপাত করতে থাকে আর তিনি বলতে থাকেন, চক্ষু

অশ্রুপাত করেছে, হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু মুখ দ্বারা আমরা! কেবল এতটুকুই বলতে পারি যতটুকু পযন্ত আমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট থাকেন। হে ইব্রাহীম (রাঃ) আমরা তোমার বিদায়ে ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত।তিনি

হাসার মুহুর্তে যেভাবে ভারসাম্যনীতি পছন্দ করতেন, তেমনি দুঃখ ও বেদনার মুহুর্তেও ক্রন্দন করার ক্ষেত্রেও ভারসাম্যনীতি রক্ষা করতেন।

৮. বিপদকালীন সময়ে দুআ পড়তেনঃ

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ বিপদগ্রস্থ হলে এ দোয়া পড়তে- ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাজি আ-ফা‘-নি মিম্মাব- তালাকা বিহি, ওয়াফাদ্দালানি আলা কাসিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।’বিপদের সময় মহানবী (সা.) যে ৩টি দোয়া পাঠ করতেন এবং সেই দোয়াগুলো তার উম্মতদেরও পাঠ করতে বলেছেন বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।

আরও পড়ুনঃ দারিদ্র্য বিমোচনে মহানবী (সাঃ) এর অপূর্ব শিক্ষা

দোয়া ৩টি হলো-

১। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।
২। আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান।’
৩। আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।

৯. ন্যায়ের পক্ষে অবস্থানঃ

নবীর ﷺ বয়স যখন ২০ বছর, তখন ওকায বাজারে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের এক পক্ষে ছিলেন কুরাইশগণ এবং তাদের মিত্র বনু কিনানাহ। বিপক্ষে ছিলেন- ক্বায়স আয়লান। এটা “ফিজার” হিসেবে খ্যাত। বুন কিনানাহর বাররায নামক এক লোক ক্বায়স আয়লানের তিন লোককে হত্যা করে। এখবরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে যুদ্ধ বেঁধে যায়। রাসূল ﷺ দুশমনের পক্ষ থেকে তীর এসে পড়লে তা তিনি কুড়িয়ে নিয়ে সত্যের পক্ষে থাকা আপন চাচাদের দিয়ে দিতেন। চলমান যুদ্ধ কালীন বিপদেও তিনি কিশোর কালে সত্যেরপক্ষে অবস্থান নেন।

[★★★]  2020 সালে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার জিতেছেন কে

[★★★]  ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ইনকাম করার ৫ টি উপায়

[★★★]  রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী