সালাতের গুরুত্ব ও পরিত্যাগকারীর পরিণাম
নামায/সালাত হলো ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। তাই ঈমান আনার পরই বান্দার প্রধান কাজ হল সালাত কায়েম করা। সালাতের প্রতি গুরুত্বারােপ করে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বহু আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। সালাতের ব্যাপারে গাফেলদের জন্য কঠিন পরিণতির ঘােষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা, “সুতরাং দুর্ভোগ সেসব মুসল্লীর জন্য, যারা নিজেদের সালাতের ব্যাপারে উদাসীন।”
মহানবী বলেন : “বান্দা এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলাে সালাত বর্জন করা।” আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার আছে তা হলাে সালাত; অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলাে সে যেন কাফির হয়ে গেলাে। তিনি আরাে বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযত (যথাযথভাবে যাবতীয় হুকুম-আহকাম সহ আদায়) করে না, কিয়ামত দিবসে সালাত তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির কারণ হবে না, বরং কিয়ামত দিবসে তার হার হবে কারূন, ফির’আওন, হামান ও উবাই বিন খালফ-এর সাথে।
হে প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! উল্লিখিত আয়াত ও হাদীসসমূহ লক্ষ করলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, সালাতের গুরুত্ব কত এবং তা পরিত্যাগকারীর পরিণাম কীরূপ ভয়াবহ।
সালাত আদায়ের ফযীলত :
আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন, “এবং যারা. নিজেদের. সালাত আদায়ে. যত্নবান, তারাই সম্মানিত হবে
জান্নাতে।” রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “বলাে তাে, যদি তােমাদের কারাে বাড়ীর দরজার সামনে কোনাে প্রবাহমান নদী থাকে, আর তাতে সে প্রত্যহ পাঁচ বার গােসল করে তবে কি তার শরীরে কোনাে ময়লা থাকবে? সাহাবীগণ
বললেন : না, কখনই তার শরীরে কোনাে ময়লা থাকবে না। নবী বললেন : এরূপ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ, এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন। নবী আরাে বলেন,
যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযত (যথাসময়ে যাবতীয় হুকুমসহ আদায়)করে, সালাত তার জন্য কিয়ামতের দিবসে জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির কারণ হবে।” এখন জানা দরকার কত বয়সে সালাত শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ দারিদ্র্য বিমোচনে মহানবী (সাঃ) এর অপূর্ব শিক্ষা
সালাত কখন শুরু করতে হবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তােমাদের সন্তানেরা সাত বছরে পদার্পণ করলে সালাতের আদেশ দেবে। আর দশ বছর বয়সেও (ভালােভাবে) সালাত আদায় না করলে তাদেরকে শাসন করবে এবং তখন হতেই তাদের বিছানা আলাদা করে দেবে।
সালাতের সময় —
সালাতের সময়ের উপর গুরুত্বারােপ করে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয় মু’মিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা ফরয করে দেয়া
হয়েছে। উম্মে ফারওয়াহ কারুক বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন কাজটি অধিক উত্তম? তখন নবী বলেন, আওয়াল তথা প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা।
ফজর সালাতের সময় :
ফজর সালাতের সময় সুবহে সাদিক হতে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। সাহাবী জাবির মােল্লা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) “গালাসে” (অর্থাৎ একটু অন্ধকার থাকতে) ফজরের সালাত পড়তেন।
যােহর সালাতের সময়:
সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে ঢলে যাওয়া হতে আরম্ভ করে প্রতিটি বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত যােহরের সময়।আনাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরমকালে দেরি করে হালকা ঠাণ্ডা হলে এবং শীতকালে জলদি করে যােহর পড়তেন।
আসর সালাতের সময় :
প্রতিটি বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়া পর্যন্ত আসরের সময়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেন, সূর্য যখন হলুদ বর্ণের হয়ে শয়তানের দু’শিং এর মাঝখানে এসে যায়, তখন মুনাফিকূরা আসরের সালাত পড়ে। তবে বিশেষ ওজরবশত সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত আদায় করতে
পারলেও তা আসূরের সময়ের মধ্যে গণ্য হবে।
মাগরিব সালাতের সময় :
সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর না হওয়া পর্যন্ত মাগরিব সালাতের সময়।
ইশা সালাতের সময় :
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর হওয়ার পর থেকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত ‘ইশার সালাতের সময়। তবে রাত্রির প্রথম এক তৃতীয়াংশের শেষের দিকে অথবা মধ্যরাত পর্যন্ত দেরি করে পড়া উত্তম।
যে সমস্ত সময়ে সালাত আদায় নিষেধ :
সাহাবী ‘উকবাহ্ ইবনু আমির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আমাদেরকে তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং মাইয়্যেতের দাফন করতে নিষেধ করেছেন।
(১) যখন সূর্য উঠতে থাকে- যতক্ষণ না পূর্ণভাবে উঠে যায়।
(২) ঠিক দুপুর বেলা- যতক্ষণ না সূর্য একটু পশ্চিমে ঢলে যায়।
(৩) সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়, যতক্ষণ না পূর্ণভাবে অস্ত যায়। অনুরূপ ফজরের সালাতের পর হতে সূর্য উদয় পর্যন্ত এবং আসরের সালাতের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সালাত আদায় করা নিষেধ।
অবশ্য এ দু’সময়ে কৃাযা ফরয সালাত, ফজরের সুন্নাত ও তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়া যাবে । জুমু’আর দিন দুপুর বেলা এবং কাবা শরীফে যে কোনাে সময়ে সালাত আদায় করা বৈধ।
ফজর ও আসরে ব্যতিক্রম :
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সূর্য উঠার আগে ফজরের এক রাকআত পায় সে ফজরের সালাত পেয়ে গেল এবং যে ব্যক্তি সূর্য ডােবার আগে আসরের এক রাকআত পায় সে আসরের সালাত পেয়ে গেল। (অর্থাৎ সূর্য ডুবে ও উঠে গেলেও বাকী এক ও তিন রাকআত সালাত পড়ে নিতে হবে)। এটা বিশেষ ওযরের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।
ফজরের ফরযের পর ফজরের সুন্নাত পড়তে মানা নেই :
জামা’আতের জন্য ইক্বামাত হলে ফরয সালাত ব্যতীত অন্য কোন (সুন্নাত বা নফল) সালাত হবে না। তাই ফজরের ইকৃামাত শুরু হওয়ায় সুন্নাত পড়তে না
পারলে জামা’আতের সাথে ফরয পড়ে নিতে হবে। অতঃপর ফরয শেষ করে (সূর্য উঠার পূর্বেই) ২ রাক’আত সুন্নাত পড়তে পারবে। সূর্য উঠার পরও পড়া যাবে।