📖 📖 দি আলকেমিস্ট : পাওলো কোয়েলহোpdf
দি আলকেমিস্ট : পাওলো কোয়েলহো বই রিভিউ।
‘দি আলকেমিস্ট’ বইটি আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ বিক্রিত একটি বই। এখনো পর্যন্ত পুরো বিশ্বে এই বইটির আট কোটিরও অধিক কপি বিক্রিত হয়েছে। অনুদিত হয়েছে শতাধিক ভাষায়। সেই সাথে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে এই বইটি। একজন আলকেমিস্ট যেমন বিভিন্ন যাদুবিদ্যা দেখিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে ফেলতে পারেন, এই বইটিও তেমনি আকৃষ্ট করেছে কোটি পাঠকের হৃদয়।
শিরোনামঃ দি আলকেমিস্ট : পাওলো কোয়েলহো বই রিভিউ
বইয়ের নাম | দি আলকেমিস্ট |
লেখক | পাওলো কোয়েলহো |
অনুবাদ | মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ |
প্রচ্ছদ | জুলিয়ান |
প্রকাশনী | চিরকুট |
মোট পৃষ্ঠা | ১৫৯ |
মুদ্রিত মূল্য | ২৫০ ৳ |
প্রথম প্রকাশ | সেপ্টেম্বর, ২০১৯ |
দ্বিতীয় সংস্করণ | ফেব্রুয়ারি, ২০২০ |
রিভিউ লেখক | সাইক |
🔷🔷🔷 দি আলকেমিস্ট’ বইটির উত্থান
লেখক পাওলো কোয়েলহো পরপর তিনটি বই প্রকাশ করেন। কিন্তু পাঠকদের নিকট হতে তেমন কোনো সাড়া পাননি তিনি। তারপর লেখকের “দি আলকেমিস্ট” নামের চতুর্থ বইটি ১৯৮৮ সালে ব্রাজিলে প্রথম প্রকাশিত হয়। কিন্তু লেখকের এই বইটিও সে সময় কারোরই নজর কাড়তে পারেনি। বইটি এক বছরের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বিক্রয় হয়। যার কারণে, প্রকাশক লেখকের সাথে সব রকমের চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কেটে যায় কয়েক বছর। অনেক চেষ্টার পর ১৯৯৩ সালে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা Harper Collins বইটি ইংরেজি অনুবাদ করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর আর লেখককে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো পৃথিবীতে বইটির কয়েক কোটি কপি বিক্রয় হয়ে যায়।
আরও দেখুন পিএইচডির গল্প : আসিফ নজরুল
📙📙 দি আলকেমিস্ট: সারমর্ম
“”দি আলকেমিস্ট” বইটি মূলত Adventure Genre-র বই। সান্তিয়াগো নামের একটি ছেলেকে নিয়ে বইটির মূল কাহিনি শুরু হয় । ছেলেটি পেশায় একজন মেষপালক ছিল। সে বেশ কয়েকবার স্বপ্নে দেখে, মিশরের পিরামিডের কাছে রয়েছে গুপ্তধন। এই স্বপ্নটি সান্তিয়াগো বিশ্বাস করে নেয় এবং গুপ্তধন পাওয়ায় উদ্দেশ্যে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অনেকের সাথে সাক্ষাৎ হয় সান্তিয়াগোর। তাদের মধ্যে আছেন সালেমের রাজা, একজন ইংরেজ, একজন স্ফটিক ব্যবসায়ী এবং একজন আলকেমিস্টসহ আরও অনেকে। এখানে আলকেমিস্ট হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ধাতুকে সোনায় রূপান্তরিত করতে পারেন।
এভাবে, যাদের যাদের সাথে সান্তিয়াগোর সাক্ষাৎ হয়, তাদের সকলের থেকে সান্তিয়াগো কিছু না কিছু শেখে। এভাবে কাহিনি এগিয়ে যেতে থাকে গল্পের পরিণতির দিকে।
★★★ দি আলকেমিস্টত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু
এই বইটিতে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহের সাথে সাথে কিছু না কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমরা যদি সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবনযাত্রা আরেকটু সহজ হতে পারে। এসব শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুগুলো আমরা বাংলা কবিতায় এবং ভাব-সম্প্রসারণে পড়ে এসেছি। কিন্তু, তখন হয়তো আমরা সেগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারিনি। “দি আলকেমিস্ট” বইতে সেসব শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে সহজ ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে, আমরা সেগুলো সহজে উপলব্ধি করতে পারব। এখানে সেগুলোর কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো :-
“করিতে পারি না কাজ,
সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।”
—- কামিনী রায়
কবি কামিনী রায়ের লেখা “পাছে লোকে কিছু বলে” কবিতার এই শিক্ষণীয় লাইনগুলো আমরা অনেকেই জানি। “দি আলকেমিস্ট” বইয়ের মেষপালক সান্তিয়াগো এই শিক্ষাটি লাভ করে সালেমেরা রাজার নিকট থেকে। সালেমের রাজা একজন রুটি বিক্রেতার উদাহরণ দেয় সান্তিয়াগোকে। আন্দালুসিয়ার সমাজব্যবস্থায় মেষপালকের চেয়ে একজন রুটি বিক্রেতার কদর বেশি। এজন্য, সেই রুটি বিক্রেতা তার জীবনের বিশ্ব ভ্রমণের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে রুটি বিক্রেতা হয়। কেননা, সে রুটি বিক্রেতা না হলে লোকে তাকে নিয়ে সমালোচনা করত।
এদিকে, মেষপালক সান্তিয়াগোর জীবনেও রয়েছে একটি লক্ষ্য। সে যদি লোকে কি বলবে এই চিন্তা করে, তাহলে তাকেও বিসর্জন দিতে হবে তার জীবনের আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যকে।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।
—- সুনির্মল বসু
কবি সুনির্মল বসুর “সবার আমি ছাত্র” কবিতার এই পঙক্তিগুলোর মতো আমরাও আশেপাশের উপকরণ থেকে সবসময় কিছু না কিছু শিখতে পারি। তারপর সেটা নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে আরও একটু সুন্দর করে তুলতে পারি।
সান্তিয়াগো মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার সময় হৃদয় দিয়ে এই শিক্ষাটাই উপলব্ধি করে। সে তার পালিত ভেড়াগুলো এবং কাচের জিনিসগুলো থেকে অনেককিছু শিখেছে। এরপর সে মরুভূমি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।
আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি পচা অতীত,
গিরি-গুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত।
সৃজিব জগৎ বিচিত্রতর, বীর্যবান,
তাজা জীবন্ত সে নব সৃষ্টি শ্রম-মহান।
—- কাজী নজরুল ইসলাম
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের “অগ্র-পথিক” কবিতার এই লাইনগুলো থেকে আমরা শিক্ষা অর্জন করতে পারি,খারাপ অতীত নিয়ে আমাদের কখনই হতাশ হওয়া উচিৎ নয়।
এই শিক্ষাটি আমরা একজন উট-চালকের কথা থেকে আরও সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে পারি। সান্তিয়াগো যখন মরুভূমি পাড়ি দিচ্ছিল, তখন এক উট-চালক বলেন :-
“আমি না অতীতে বাস করি, আর না ভবিষ্যতে। আমার আগ্রহের কেন্দ্রে শুধুই বর্তমান। আর যারা কেবল বর্তমানে বাঁচে, তাদের চাইতে সুখী অন্য কেউ হয় না।” বইটির ৮৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
আপনার জন্যেঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী
★★★ ভাষা-শৈলী
“দি আলকেমিস্ট” বইটির অনেকগুলো বাংলা অনুবাদ বাজারে উপলভ্য। সেগুলোর মধ্যে ভাষাগত সহজবোধ্যতার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাখা যায় মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহর অনুবাদকৃত এই বইটি। তুলনামূলকভাবে এই বইটির অনুবাদের ভাষা বেশ প্রাঞ্জল এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অধ্যায়ে বিভক্ত হয়েছে বইটি।
তবে, বইটির কাহিনি চিত্রায়িত হয়েছে বিদেশি দৃশ্যের বর্ণনায়। আমরা যারা বিদেশি দৃশ্যের সাথে পরিচিত নই, তাদের জন্য বইয়ের ঘটনাবলি কল্পনা করে নিতে একটু সমস্যা হতে পারে এবং বিরক্তির উদ্রেক হতে পারে। তবে, বইটির গভীর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারলে বিরক্তির বদলে বইটির প্রতি অনুরক্তি তৈরি হবে বলে আশা করা যায়।
★★★ প্রচ্ছদ, বাঁধাই ও মুদ্রণ
বইটির প্রচ্ছদ দেখে আমার মনে হয়েছে যেন, মধ্যপ্রাচ্যের চিত্রশিল্পের ভাবগাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে এই বইটির অসাধারণ একটি প্রচ্ছদ তৈরি করা হয়েছে। আরবি ক্যালিগ্রাফির মতো করে বাংলায় লেখা হয়েছে বইয়ের “দি আলকেমিস্ট” নামটি।
বইয়ের মাঝখানে একটি ছেলেকে দেখা যাচ্ছে, যা হয়তো বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র সান্তিয়াগোকে নির্দেশ করে। আবার, গোলাকার বৃত্তের মধ্যে রয়েছে কিছু পিরামিডের ছবি, যেখানে যাওয়ার জন্য সান্তিয়াগো বেরিয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ, বইটির প্রচ্ছদে বইটির মূল কাহিনির একটি প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তাছাড়া, বইটিতে দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের Hard Cover। বইয়ের ভিতরে আছে উন্নতমানের Cream Color-এর Page। বইটি মাত্র ১৬০ পৃষ্টার হলেও দেওয়া হয়েছে সুদৃশ্য একটি ফিতা। মোট কথা, বইটির বাঁধাই এবং মুদ্রণ অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
❤❤ ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি
বইটির ভাষা সহজবোধ্য হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে বইটি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। আমি মনে করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য বইটি Must Read একটি বই।
তবে, বইটি পড়তে পড়তে একটি স্থানে এসে আমি অবাক হয়েছি। বইয়ের মূল লেখক পাওলো কোয়েলহো একজন অমুসলিম। যার কারণে, ইসলাম সম্পর্কে তাঁর ইতিবাচক মনোভাব থাকবে, এমনটা আশাই করি না। কিন্তু লেখক একজন অমুসলিম হয়ে বইটিতে ইসলামের সৌন্দর্য এবং উদারতার দিকটি তুলে ধরেছেন। বইটির ৬৩ পৃষ্টায় এক স্ফটিক ব্যবসায়ীর বয়ানে উঠে এসেছে ইসলামের বিভিন্ন ন্যায়নীতি ও উদারতার কথা। এই ব্যাপারটি আমাকে অবাক ও মুগ্ধ করেছে।
★★ শেষ কথা
“দি আলকেমিস্ট” বইটি পড়ে হয়তো আলকেমির মতো অতি প্রাকৃতিক বিদ্যা অর্জন করা যাবে না। তবে, বইটির মূল মর্মার্থ ও শিক্ষা গভীরভাবে উপলব্ধি করলে এবং সেটা নিজের জীবনে প্রয়োগ করলে, জীবনকে আরেকটু Better করা সম্ভব।
দি আলকেমিস্ট : পাওলো কোয়েলহোpdf download
দি আলকেমিস্ট : পাওলো কোয়েলহো বই টি কিভাবে ডাউনলোড করবেন । সহজে বঙ্গ জার্নাল সাইট থেকে ডাউনলোড করেনেন । দি আলকেমিস্ট : পাওলো কোয়েলহোpdf বই । পাওলো কোয়েলহো বই ডাউনলোড
আরও পড়ুনঃ দেশে বিদেশে সৈয়দ মুজতবা আলী রিভিউ