মহানবির (সা) রাজনৈতিক জীবন
মহানবির (সা) রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে প্রথমে বিশ্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাসূল সা. তাঁর আগমনের পূর্বে সারা বিশ্বসহ আরবের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত বিশৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল ও ভয়াবহ। সেই সময়ে রাজনীতি মুলকের জঙ্গি পদ্ধতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, যা উপজাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। উপজাতীয়দের যুদ্ধ, যুদ্ধ, যুদ্ধ এবং আক্রমণ চলতে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার বা নিয়ন্ত্রণ বলে কিছু নেই। এমন করুণ রাজনৈতিক দুর্ভাগ্য। মানবজাতির মুক্তির দিকে। বিশৃঙ্খল আরবের মাটিতে তার অবিস্মরণীয় রাজনৈতিক বিপ্লব বিশ্ব ইতিহাসে নামবে।
রাজনীতি কি
রাজনীতিকে ইংরেজিতে ‘কূটনীতি’ এবং আরবিতে ‘আস-সিয়াস’ (السياسة) বলা হয়। রাজতন্ত্র একসময় রাজনীতি নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতিকে বলা হয় রাজনীতি বা রাজনীতি। কিন্তু এখন রাজনীতি আর রাজনীতি এক নয়। রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে যে পার্থক্য, রাজনীতি ও রাজনীতির মধ্যে যেমন পার্থক্য। অর্থাৎ রাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের কার্যক্রমকে রাজনীতি বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ দারিদ্র্য বিমোচনে মহানবী (সাঃ) এর অপূর্ব শিক্ষা
রাজনৈতিক কর্মকান্ড
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা যাদের আছে তাদের সংশোধন করা, তাদের কর্মের সমালোচনা করা, তাদের নীতিগত ত্রুটিগুলি উন্মোচন করে জনগণকে শিক্ষিত করা এবং এই জাতীয় সমস্ত কাজ রাজনৈতিক কাজ বলে বিবেচিত হয়। মূলত প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারী নেতৃত্বকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টাই রাজনীতির প্রধান কাজ। ভ্রান্ত নীতি ও আদর্শের অধিকারী সরকারি কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা চালু করাই আসল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
আমার রাজনৈতিক দায়িত্বের কথা ভাবুন
কোরানে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘তিনিই তিনি যিনি তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাকে (সত্য ধর্মকে) অন্য সব ধর্মের ওপর বিজয়ী করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট” (সূরা আল ফাতহ, ২৮)। তিনি সূরা তওবা (আয়াত 33) এবং সূরা আস-সাফা-ও (আয়াত 09) এ একই দায়িত্ব উল্লেখ করেছেন।
নতুন জীবনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হল যে উদ্দেশ্যের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ তাকে সত্য দ্বীন নিয়ে পৃথিবীতে প্রেরিত করা হয়েছিল এবং আল্লাহর দ্বীনকে মানবসৃষ্ট সকল ধর্মের উপর জয়ী করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, সমগ্র জীবনধারাকে বিজয়ী মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই ধর্মের কর্তব্য। মানব সমাজে দ্বীন-ইসলামের বাস্তবায়নই এ দায়িত্বের উদ্দেশ্য। তিনি যা-ই করেছেন তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য।
আমার রাজনৈতিক লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা করুন
উপরের আয়াতগুলো থেকে। রাজনীতির উদ্দেশ্য স্পষ্ট বোঝা যায়। তার রাজনীতি ইসলামের জন্য। দেশ ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে। তিনি বলেন, ধর্মীয় বিধি-বিধানই প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে এবং মানুষের অন্তরে ধর্মীয় চেতনা সঞ্চার করে একজন খোদাভীরু ব্যক্তি তৈরি করবে। কারণ, তাহলেই সমাজে বর্বরতা ও নৈরাজ্য দূর হবে। পয়েন্টের পরিপ্রেক্ষিতে তার রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলি হল:
1. আল্লাহ পৃথিবীতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং তার নির্ধারিত আইন প্রতিষ্ঠা করেন।
2. শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মোতাবেক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা।
3. জনগণের মধ্যে বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্য দূর করে সমতা, শান্তি, প্রশান্তি, ন্যায়বিচার ও সুষম শাসন ব্যবস্থা প্রদান।
4. দক্ষতা ও নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
5. পার্থিব পথ সকলের জন্য সহজ করা, যাতে তার অনন্ত জীবন পার্থিব প্রতারণার গোলকধাঁধায় নষ্ট না হয়।
মহানবী সা. রাজনীতির বৈশিষ্ট্য
রাসূলের রাজনীতিতে তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
1. ভূমিকা ও নৈতিক শক্তি: রাজনীতিতে সকল নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাদের চরিত্র এবং নৈতিক শক্তি। তার নির্মল দীর্ঘায়ুর নিঃস্বার্থতা আর কোথাও পাওয়া যায় না। মহানবী সা. রাজনীতিতে এই নিঃস্বার্থতা ও নৈতিকতার বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট। এজন্য তার বিরুদ্ধে কোনো সস্তা স্লোগান দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক সক্রিয়তাই তার নিঃস্বার্থ ভূমিকার প্রভাবকে আটকাতে পারেনি।
2. অর্থের বিশুদ্ধতা: তিনি কোনো অন্যায় ও বিশৃঙ্খল উপায় ব্যবহার করে রাজনীতিতে জড়িত হননি। শত্রুদের প্রতি তার ব্যক্তিগত রাগ নেই। সবচেয়ে বড় শত্রুও যদি ইসলামের আদর্শ মেনে নিয়ে তার নেতৃত্ব গ্রহণ করত, তাহলে সে তার অতীতের সব ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিত।
3. উদ্দেশ্যের সততা: তিনি ইসলামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যদি তার উদ্দেশ্য একজন মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, তবে তিনি প্রথমে মক্কার নেতৃত্বের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন এবং রাজা হবেন।
এই তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যই রসুলের রাজনীতিকে স্বার্থপর ও জাগতিক রাজনীতি থেকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু
সকল ধর্মের উপর দ্বীনের বিজয়ের ব্যাপারে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ যে দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন তা মদিনায় আবির্ভূত হয়। মদিনার সময়টি ছিল আল্লাহর আইন প্রয়োগের সময়। আর মক্কার সময় হলো মনের প্রস্তুতি। অর্থাৎ 40 বছর বয়সে নবী যে সময়টি মক্কায় কাটিয়েছিলেন তা ছিল সম্পূর্ণ নির্জন, পার্থিব উপায়ের কথা উল্লেখ করার মতো নয়। এভাবে বলা যায় যে তিনি তার মহান রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।