Table of Contents
অযূ ও ফরয গোসলের নিয়ম
অযূ ও ফরয গোসলের নিয়ম নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পবিত্রতা সালাতের চাবিকাঠি। পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত সালাত কবূল হবে না। পবিত্রতা অর্জনের জন্য অযূ ও গােসল অথবা উভয়ের অপারগতায় তায়াম্মুম করতে হয়।
অযূর নিয়মাবলী
- সর্বপ্রথম মুখে কোনাে শব্দ পাঠ না করে অন্তরে দৃঢ় সংকল্প করার মাধ্যমে নিয়্যাত করা।
- অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদ্ধতি অনুযায়ী অযূ করা।
অযূর শুরুতে “বিসমিল্লাহ” বলবে। তারপর দু’হাত কবৃজি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করবে। - হাত ধােয়ার সময় এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ভরেখেলাল করবে। উল্লেখ্য যে রাতের ঘুম হতে উঠার পর দু’হাত কবজি পর্যন্ত ৩ বার ধােয়ার আগে পানির পাত্রে হাত ডুবানাে নিষেধ।
- তারপর ৩ বার একত্রে কুলি ও নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে ভালাে করে সাফ করবে। তারপর (মাথার সম্মুখের চুলের গােড়া হতে দুই কানের পার্শ্ব দিয়ে থুতনির নীচ পর্যন্ত) সমস্ত মুখমণ্ডল ৩ বার ধৌত করবে।
- বেশি দাড়ি হলে দাড়ির ভেতরে এক অঞ্জলি পানি দিয়ে খেলাল করবে।
- তারপর দু’হাত কনুই পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করবে তারপর দু’হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করবে। মাথা মাসাহের সময় হাতের তালুসহ আঙ্গুল ভিজিয়ে নিয়ে উভয় হাত কপালের উপর রেখে মাথার উপর দিয়ে পেছন পর্যন্ত নিয়ে আবার পেছন হতে উভয় হাত টেনে ঐ একই স্থানে পৌছাবে যেখান হতে আরম্ভ করেছিল।
- মাথায় পাগড়ী থাকলে পাগড়ীর উপর মাসাহ করা যায় এবং দুই শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর অংশ ও দুই বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা বাইরের অংশ মাসাহ করবে। মাথা ও কান একবার মাসাহ করবে।
অতপর যথাক্রমে ডান পা ও বাম পা গিরা পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করবে। পা ধােয়ার সময়। হাতের আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলগুলাে খেলাল করবে। অযূ শেষে একটু পানি নিয়ে গুপ্তাঙ্গ বরাবর কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দেবে। দু’হাতের পিঠ দ্বারা ঘাড় মাসাহ করা বিদ’আত। কারণ এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কোনাে সহীহ প্রমাণ নেই।
অযুর পরে কি দু’আ পড়তে হয়
পরের দু’আ
‘ওমার ইবনুল খাত্তাব হতে বর্ণিত, নবী কারীম (সা) বলেন, তােমাদের মধ্যে যখন কেউ ভালাে করে অযূ করবে, তারপর নিচের দুআটি পাঠ করবে- তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসূলুহ্।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনাে মাবুদ নেই। আমি আরাে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
তাহিয়্যাতুল অযূ বা অযূর সালাত :
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যদি কোনাে মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর একাগ্রতার সাথে দুই রাকআত সালাত আদায় করে থাকে তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ দারিদ্র্য বিমোচনে মহানবী (সাঃ) এর অপূর্ব শিক্ষা
[★★★] রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী
অযূ ভঙ্গের কারণসমূহ :
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অযূ ভঙ্গের কারণসমূহ নিম্নরূপ :
(১) মল-মূত্রের দ্বার দিয়ে কোনাে কিছু বের হলে।
(২) বাতকর্ম ঘটলে।
(৩) শােয়া অবস্থায় গভীরনিদ্রা গেলে।
(৪) যে সব কাজ করলে গােসল ফরয হয় তা ঘটলে।
(৫) উটের গােশতখেলে।
(৬) পর্দাহীন অবস্থায় গুপ্তাঙ্গে হাত লাগলে।
(৭) জ্ঞানহারা হয়ে গেলে।
(৮) মযী বের হলে।
(৯) মেয়েদের মাসিক শুরু হলে।
মোজার উপর মাসাহ করার নিয়ম :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বই ও সাহাবায়ে কিরাম খুফ্ (চামড়ার তৈরি মােজা) ও জাওরাবের (সুতী বা পশমী মােজার) উপর মাসাহ করতেন। গৃহে অবস্থানকালে ২৪ ঘণ্টা এবং প্রবাসে (সফরে) ৩ দিন ও ৩ রাত মােজা না খুলে তার উপর মাসাহ করা চলবে। তবে শর্ত হল, অযূ অবস্থায় মােজা পরিধান করতে হবে।
মাসাহ করার নিয়ম : হাত পানিতে ভিজিয়ে পায়ের পিঠ ১ বার মাসাহ করতে হবে। যে সমস্ত কারণে অযূ নষ্ট হয় ও গােসল ফরয হয় তা ঘটলে অথবা মােজা
খুলে গেলে মােজার উপর মাসাহ নষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপ নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হয়ে গেলেও মােজা খুলে অযূ করতে হবে।
ফরয গােসল করার পদ্ধতি :
- প্রথমে দু’হাত কবজি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে।
- তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ও তার আশপাশ ভালােভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে বাম হাত মাটিত বা সাবান দিয়ে ভালাে করে ধৌত করতে হবে।
- অতঃপর দুপা ব্যতীত নামাযের অযূর ন্যায় অযূ করত মাথায় তিন আঁজল পানি দিতে হবে।
- অতঃপর সমস্ত শরীর প্রথমে ডানে তারপর বামে পানি ঢেলে ধুয়ে নিতে হবে। শেষে একটু সরে গিয়ে দু’পা ধৌত করতে হবে।
- পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালভাবে ভেজাতে হবে।মহিলাদের শুধু চুলের গােড়া ভেজালে যথেষ্ট হবে।
- এ পদ্ধতিতে ফরয গােসলের পর সালাতের জন্য আবার নতুন করে অযূ করতে হবে না, গােসলই যথেষ্ট; যদি গােসলের মধ্যে অযূ ভঙ্গের কোনাে কারণ না ঘটে।