জীবনানন্দ দাশ, কবি
JIBANANANDA DAS
জন্মঃ ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯; মৃত্যঃ ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন বরিশালে ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী।যদিও পারিবারিক সূত্রে আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরে। পিতা সত্যেন্দ্রনাথ দাশ বরিশালের ব্রজমােহন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন স্বভাবকবি।
জীবনানন্দ দাশ ব্রজমােহন বিদ্যালয় থেকেই প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন ১৯১৫ সালে। দু’বছর পরে ব্রজমােহন কলেজ থেকে আই,এ পাশ করেন। এর পরে তিনি চলে যান কলকাতায়। সেখানে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে লাভ করেন অনার্স ও এম. এ. ডিগ্রি ১৯১৯ এবং ১৯২১ সালে।
এরপর কর্মজীবন শুরু হয় জীবনানন্দের। প্রথমে কলকাতা সিটি কলেজ, পরে বাগেরহাট কলেজ, তারপরে দিল্লীর রামযশ কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩০ সালে তিনি ঢাকার লাবণ্যগুপ্তের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর জীবনানন্দ দাশের কিছুকাল কাটে বেকার জীবন। কারণ বিবাহের পর তিনি আর দিল্লী ফিরে যাননি।
জীবনানন্দ দাশ শেষ পর্যন্ত অধ্যাপনার চাকুরী নিয়ে চলে আসেন বরিশালে। সময়টা ছিল ১৯৩৫ সাল। দীর্ঘদিন ছিলেন তিনি তার স্বপ্নের শহর বরিশালে। কারণ এখানেই কেটেছে তার বাল্যজীবন আর কৈশাের জীবনের বেশির ভাগ সময়। ব্রজমােহন কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিয়ােজিত ছিলেন ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ দীর্ঘ দশ বছরেরও বেশি সময়। বলা বাহুল্য তাঁর কবি জীবনের মূল সময়ই ছিল এটা।
১৯৪৭ সালে তিনি পুনরায় ফিরে যান কলকাতায়। সেখানে দৈনিক স্বরাজ নামে একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপরে আবার অধ্যাপনায় ফিরে যান তিনি। কাজ নেন খড়গপুর কলেজে। থাকেন একবছর ‘৫১-৫২। এর পরপরই যান বরিষা কলেজে, সেখান থেকে হাওড়া গার্লস কলেজে ১৯৫২ তে। ১৯৫৪ তে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই কলেজেই অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নির্জনতম কবি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন প্রচার বিমুখ জীবনানন্দ দাশ। কাব্য সাধনার প্রথম পর্যায়ে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই রবীন্দ্র-নজরুলের কাব্যধারায় প্রভাবিত ছিলেন। কিন্তু ক্রমেক্রমে আপন কাব্যভুবনে ফিরে আসেন তিনি। গড়ে তােলেন নিজস্ব কাব্য রচনার ধারা। পরবর্তীকালে যা আমাদের বাংলা সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র কাব্য ধারা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
আরও পড়ুনঃ বনলতা সেন কবিতা
‘চিত্ররূপময়’ ছিল জীবনানন্দের কবিতা। তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে আবহমান বাংলার প্রকৃত চিত্র। তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা ষাটের দশকে বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বা বিকাশে যথেষ্ট সহায়তা প্রদান করেছিল। ১৯৭১-এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এদেশের কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছিল তার কোন কোন কবিতা।
🔷🔷🔷 জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
গ্রন্থের নাম | প্রকাশকাল |
ঝরা পালক | ১৯২৮ |
ধূসর পান্ডুলিপি | ১৯৩৬ |
বনলতা সেন | ১৯৪২ |
মহাপৃথিবী | ১৯৪৪ |
সাতটি তারার তিমির | ১৯৪৮ |
রূপসী বাংলা | ১৯৫৭ |
বেলা অবেলা কালবেলা | ১৯৬১ |
🔷🔷🔷 জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত প্রবন্ধ
কবিতার কথা (১৯৫৬)
🔷🔷🔷 জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত উপন্যাস
- মাল্যবান (১৯৭৩)
- সতীর্থ(১৯৭৪)
- জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর বেশ পরে প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ‘মাল্যবান’ ১৯৭৩ সালে এবং ‘সতীর্থ’ ১৯৭৪ সালে।
🔷🔷🔷 জীবনানন্দ দাশের গল্পগ্রন্থ
‘জীবনানন্দ দাশের গল্প’
সুবিনয় মুস্তফী ও সুকুমার ঘােষের সম্পাদনায়
তাঁর গল্প সংকলন ‘জীবনানন্দ দাশের গল্প’ প্রকাশিত হয়। পরে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কাব্য সমগ্র, কাব্যসম্ভার ইত্যাদি নামে তাঁর রচনাসমূহ।
১৯৫৪ সনের ২২শে অক্টোবর কলকাতায় আকস্মিকভাবে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তার
জীবনাবসান ঘটে। বাংলা কাব্য সাহিত্যের জগতে জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু এক অপূরনীয় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে কারণ তিনি ছিলেন বাংলা কবিতায় এক স্বতন্ত্র ধারার কবি।
এক নজরে কবি পরিচিতি
নাম | জীবনানন্দ দাশ |
পিতৃ পরিচয় | পিতার নামঃ সত্যেন্দ্রনাথ দাশ
মাথার নামঃ কুসুমকুমারী দাশ |
শিক্ষাজীবন | মাধ্যমিকঃ ম্যাট্রিক (১৯১৫), ব্রজমোহন স্কুল,
উচ্চ মাধ্যমিকঃ আইএ (১৯১৭) ব্রজমোহন কলেজ, উচ্চতর শিক্ষাঃ বিএ অনার্স (১৯১৯), কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ, এমএ ইংরেজি (১৯২১) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। |
পেশা/ কর্মজীবন | অধ্যাপনাঃ কলকাতা সিটি কলেজ (১৯২২-১৯২৮); বাগেরহাট কলেজ (১৯২৯), দিল্লির রামযশ কলেজ (১৯২৯-১৯৩০), ব্রজমোহন কলেজ (১৯৩৫-১৯৪৬), খড়গপুর কলেজ (১৯৯৫১-১৯৫২), বড়িষা কলেজ (১৯৫২), হাওড়া গার্লস কলেজ (১৯৫৩-১৯৫৪)
সম্পাদনাঃ দৈনিক স্বরাজ । |
সাহিত্য কর্ম | উপন্যাসঃ
কাব্যঃ ঝরা পালক, ধূসর পান্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা প্রবন্ধগ্রন্থঃ কবিতার কথা |
জীবনাবসান | মৃত্যঃ ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ |
🔷🔷🔷 কবি সম্পর্কে আরাে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
📙 আধুনিক বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ ।
📙 পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশাল ব্রজমােহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সেকালের বিখ্যাত কবি ।
📙 জীবনানন্দ দাশের অসাধারণ কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘চিত্ররূপময়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
📙 বুদ্ধদেব বসু তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন নির্জনতম কবি হিসেবে।
আমার দেখা নয়াচীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:
১. জীবনানন্দ দাশ রচিত উপন্যাস কোনটি?
🔷 মাল্যবান ও
২. বাংলা সাহিত্যে রূপসী বাংলার কবি হিসেবে খ্যাত কে?
🔷 জীবনানন্দ দাশ ।
৩. জীবনানন্দ দাশের সঠিক জন্ম-তারিখ কোনটি?-
🔷 ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯।
৪. কবি জীবনানন্দ দাশের সাথে বিখ্যাত কবি কুসুমকুমারী দাশের কী সম্পর্ক ছিল?
🔷 মা–ছেলে ।
৫. বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?
🔷 নির্জন-তম কবি হিসাবে।
৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশের কাব্য বৈশিষ্ট্যকে কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?
🔷 চিত্ররূপময়
৭. কবি বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলন ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণাদায়ী কোন ধরনের কবিতার জন্য স্মরণীয়?-
🔷 নিসর্গবিষয়ক কবিতা।
৮. জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ নয় কোনটি?
🔷 সাত ভাই চম্পা।
৯. ‘ঝরা পালক’ ও ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ জীবনানন্দ দাশের কোন ধরনের রচনা?
🔷 কাব্যগ্রন্থ ।
১০. নিচের কোন আখ্যাটি জীবনানন্দ দাশের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয়?
🔷 সােনার বাংলার কবি।
১১. জীবনানন্দ দাশ কত বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন?
🔷 ৫৫
১২.কবি জীবনানন্দ দাশ কবে মৃত্যুবরণ করেন?
🔷 ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪।
১৩. ‘এই পৃধিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কোন কোন দেব-দেবীর নাম আছে?
🔷 বরুন, বারুনী ও বিশালাক্ষী।
১৪. ‘এই পৃধিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কোন কোন রং উল্লেখ আছে?
🔷 সবুজ, হলুদ, নীল
১৫. ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’ উক্তিটি রচয়িতা কে?
🔷 কবি জীবনানন্দ দাশ
👉 বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf