বনলতা সেন কাব্য রিভিউ
কাব্যগ্রন্থ | বনলতা সেন |
কবি | জীবনানন্দ দাশ |
প্রকাশক | জয় প্রকাশন |
পৃষ্ঠা | ৪৮ |
মূলো | ৭০ |
বুক রিভিউ লেখক | মো. আল মাহমুদ (কুবি) |
তিরিশােত্তরকালের আধুনিক বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্র-নজরুল গণ্ডী বহির্ভূত রােমান্টিক ও বাস্তববাদী রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্য গ্রন্থের জন্য আজও বিখ্যাত। যারা জীবনানন্দ দাশের কাব্য ও কবিতা পড়েন তারা তাঁর বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থটি পড়েন নি এমন লােক খুঁজে পাওয়া যাবে না। ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থে কবি স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মিলন ঘটিয়েছেন এবং এ কাব্যের প্রথম কবিতা ‘বনলতা সেন’ কবিতার কবি অশান্ত, অশান্তি পৃথিবীতে শান্তির পথ খুঁজেছেন। মানব জীবনের চারিদিকে রয়েছে কন্টকময় বাধাবিপত্তি। এ বাধা-বিপত্তিকে কবি খণ্ডন করতে চেয়েছেন।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় প্রকৃতি জীবনানন্দ দাশের কাব্যে রূপময় হয়ে ফুটে উঠছে। তাঁর কাব্যে ও কবিতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আধুনিক নগর জীবনের হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বিষন্নতা, বিষাদ ও সংশয়। এ সবের জন্য তার কবিতা হয়ে উঠেছে অত্যাধুনিক। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির রূপ মুগ্ধতা, ঐতিহাসিক ও ভৌগােলিক চেতনা, ইন্দ্রিয়, সচেতনতা ইত্যাদি তাকে ভিন্ন ভিন্ন জগতে নিয়ে গেছে। বস্তুত এসব দিক দিয়ে ‘বনলতা সেন’ কবির বহুল আলােচিত, প্রশংসিত একটি জনপ্রিয় কাব্য।
আরও দেখুনঃ আমার দেখা নয়াচীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিডিএফ
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ পর্যায়ে কবির প্রকৃতি ছিল কল্পময় স্বপ্নজগৎ। এ পর্যায়ে কবি ছিলেন ঘনিষ্ঠ দর্শকের মুগ্ধতায়। অন্যদিকে বনলতা সেন কাব্যে তার প্রতীকী ব্যঞ্জনায় তাঁর চেতনার জগৎ নবজন্ম লাভ করেছে।
‘বনলতা সেন’ কাব্যের প্রথম কবিতা বনলতা সেন।
মাত্র আঠারো লাইনের এ কবিতার মধ্যে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আবার, অতীত ঐতিহ্যের বিদিশা নগরীর অন্ধকার রাত্রের সাথে বনলতা নামক এক কল্পিত নারীর মূর্তির তুলনা অতুলনীয়।
আপনার জন্যেঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী
‘আমি যদি হতাম’ কবিতায় দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ঝাউয়ের শাখা, নিম্নভূমির জলের গন্ধ, শিরীষ বনের বােনশনীড় রচনা করেছে নৈসর্গিক অস্তিত্বের আবহ; যেখানে রক্তের স্পন্দন অনুভব করে হংস মিথুন’।
জীবনানন্দ দাশের প্রিয় অনুষঙ্গ ঘাস। তাই তিনি লিখেছেন—
সবচেয়ে_আকাশ_নক্ষত্র_ঘাস_চন্দ্রমল্লিকা_রাত্রি_ভালাে….
সবুজ_ঘাসের_দেশ_যখন_সে_চোখে_দেখে_দারুচিনি _দ্বীপের_ভিতর
তেমনি_দেখেছি_তারে_অন্ধকার;
বনলতা_সেন;
‘শিকার’_কবিতায়_হরিণেরা_মনে_হয়_বাতাবি_লেবুর_মতাে_সবুজ_সুগন্ধি_ঘাস_ছিড়ে_ছিড়ে_খাচ্ছে_বনলতা_সেন_কাব্যে।
‘স্মৃতি ভাবালুতা’ ‘ব্যর্থতার বিষাদ’ কুড়ি বছর পরে’ ‘দুজন ‘অঘ্রাণ প্রান্তরে কবিতাগুলােতে জীবনানন্দীয় আমেজ সঞ্চার করেছে।
অঘ্রাণ এসেছে আজ পৃথিবীর বনে
সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে।
হেমন্ত এসেছে তবু (অঘ্রাণ প্রান্তরে)।
প্রেম চেতনার অনুষঙ্গে তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থে এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা ও সর্বগ্রাসী আতঙ্ক।
‘তখন অপর আনাে পৃথিবীতে জ্বলে
কি এক অপব্যয়ী অক্লান্ত আগুন’ (সবিতা)
দেশকালের_সীমাবদ্ধ_নাটোরের_বনলতা_সেনের_পশ্চাতে_রয়েছে_ভূগােলের_বিস্তৃতি_ইতিহাসে_এ_আয়তনের_যােগে_একটি_ক্ষুদ্র_লিরিক_হয়ে_উঠেছে—
‘সিংহল_সমুদ্র_থেকে_নিশীথের_অন্ধকার_মালয়_সাগরে
অনেক_ঘুরেছি_আমি,_বিম্বিসার_অশােকের_ধূসর_জগতে।’
প্রেমের জগতে অপ্রাপ্তি ও ব্যথা তাও কবি ইতিহাসের মধ্যে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন-
‘শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলােত্তমা নগরীর গায়ে
কি চেয়েছাে? কি পেয়েছাে? —গিয়েছে হারায়ে।’ (সুরঞ্জনা)
প্রেমের ভাবনায় সব সংকল্প ও উদ্যম হারালেও নারীর প্রেম অক্ষয়, অমর, অজর, অবিনাশী—
‘সময়ের শতকের মৃত্যু হলে তবু
দাড়িয়ে রয়েছে শ্রেয়তর বেলাভূমি। (মিতভাজন)
বনলতা সেন’ কাব্যের ধারায় প্রেম হয়ে উঠেছে এ গরীয়সী প্রতিমা, যাকে পাওয়া যায় সবুজের ঘাসের বনলতা সেনের ইতিহাসমণ্ডিত অবয়বে। তার পাখির নীড়ের মত চোখে আছে প্রত্যাশিত শান্তির ধারা।
বনলতা সেন কাব্যে প্রেম চেতনার অনুষঙ্গে কবি উপমার অভিনবত্ব সংযােজন করেছেন।
* পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে কবি উপমার অভিনবত্ব সংযােজন করেছেন।
* বেবিলনে_একা_একা_এমনি_হেঁটেছি_আমি ।
* বেতের ফুলের মতাে তার স্নান চোখ মনে আসে।
* এ পৃথিবীর পরিচিত রােদের মত তােমার শরীর।
অতএব একথা বলা যায় জীবনানন্দ দাশের কবিতায় সনাতন ধারায় প্রেম চেতনা এসেছে নারীকে ঘিরে।
বনলতা সেন কাব্য রিভিউর সাথে পিডিএফটি ডাউনলোড করে নিন । নিচের লিঙ্ক থেকে।
আরও দেখুনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ৭টি বই (বুকরিভিউ)