বনলতা সেন
“বনলতা সেন’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালে। প্রথম সংস্করণে কবিতা ছিল মোট ১২টি।“বনলতা সেন’ এর সর্বশেষ সংস্করণ এ পূর্বের ১৮টি কবিতাসহ মোট ৩০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়।
🔷🔷🔷 বনলতা সেন কবিতার মূলভাব
জীবনানন্দ দাশের কবিতা মূলত চিত্রধর্মী। তার কবিতার মাধ্যমে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, পাঠক চিত্তে শিল্পীর নিপুণ তুলির মত অঙ্কিত হয়ে যায়। এই কবিতার বর্ণনায় কবি সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগর পর্যন্ত মানুষের ভ্রমণ; বিম্বিসার আশােকের ধূসর জগতে মানুষের অস্তিত্ব; বিদর্ভ নগরীর রাতের কালাে অন্ধকারের মত চুলের বর্ণনা
এবং শ্রাবন্তীর কারুকার্যপূর্ণ সুখের উপমা মানুষের প্রাণকে সজীব করে তােলে। এ কবিতায় কবি অতীতকে মূর্ত করেছেন বেদনা ও ব্যর্থতার প্রতীকে এবং সৌন্দর্যের সার্থক উপমা প্রয়ােগে।
আরও দেখুনঃ আমার দেখা নয়াচীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিডিএফ
আঠারাে লাইনে রচিত এ কবিতায় হাজার বছরের পুরানাে ইতিহাস, সিংহল সমুদ্র, মালয় সাগর, বিদিশা, অবন্তী ইত্যাদি নামগুলি অতীত ঐতিহ্য বহন করে। অপরূপ উপমা ব্যবহারে কবিতাটি এক অনবদ্য সৃষ্টি। সীমাহীন সমুদ্রের হালভাঙ্গা জাহাজের দিশেহারা নাবিক যেমন অকস্মাৎ দারুচিনি দ্বীপের মত সবুজ বিস্তৃর্ণ বনভূমি দেখে আশ্বস্ত হয়, তেমনি মানব হৃদয়ও বনলতা সেনের মত শান্ত স্নিগ্ধ নারী মূর্তি দেখে স্বস্তি পায়। এখানেই উপমাগুলি ব্যবহৃত হয়েছে। কর্মমুখর দ্বন্দ্বময় পৃথিবীতে কোথাও শান্তি ও স্বস্তি নেই। এই মানুষকে অনাবিল শান্তি ও স্বস্তি দেওয়ার জন্য নাটোরের বনলতা সেনের মত একজন নারী মূর্তি দরকার —
“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে।”
এ কবিতায় কবি এখানে মানব সভ্যতার প্রতীক। কবি হাজার বছর ধরে পথ হাঁটতে পারেন না। বস্তুত মানব সভ্যতা হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে চলেছে। কবি নিজেকে মানব সভ্যতার প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।বনলতা সেন নামক কল্পিত নারী মূর্তিকে
অতীত ঐতিহ্যের বিদিশা নগরীর অন্ধকার রাত্রের সাথে তুলনা করেছেন। উপমা ও রূপকের সাহায্যে বনলতা নামক কবিতাটিকে কবি অতি চমৎকারিত্বে স্থান দিয়েছেন। কবির উপমা প্রয়ােগ, শব্দ চয়ন, অলংকারের ব্যবহার কাব্যিক মানদণ্ডে শ্রেষ্ঠত্বের
দাবিদার। বিশেষ করে ‘পাখীর নীড়ের মত চোখ’ এবং ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’। ইত্যাদি উপমা, অনুপ্রাসগুলি সত্যি অতুলনীয়। কবিতাটি অতিমাত্ৰক্ষর ছন্দে লেখা।
আপনার জন্যেঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী
কবিতার বর্ণনায় দেখা যায় পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে তাকিয়ে কবিকে অর্থাৎ মানব সভ্যতাকে বনলতা সেন শান্তি দিয়েছে। পৃথিবীর সকল কর্ম কোলাহলকে স্থবির করে দিয়ে দিনের শেষে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে, পাখিরা নীড়ে ফেরে। বিশ্বচরাচরের সকল লেনদেন সমাপ্ত করে পৃথিবীতে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে; সেই অন্ধকারে
মুখােমুখি বসে থাকে শুধু কবির মানব প্রতিমা বনলতা-সেন। কবি মানস প্রতিমা রহস্যময়ী, যদিও তার রূপরেখা নিছক ইন্দ্রিয়াশ্রিত। তাকে স্পষ্ট করে দেখা যায় কিন্তু ধরা বা ছোঁয়া যায় না।
বনলতা কাব্য গ্রন্থটি বাংলা কবিতার স্বতন্ত্র দিক। প্রকৃতি ভাবনা এ কবিতায় একটি স্বতন্ত্র ভঙ্গি পেয়েছে। বনলতা-সেন কবিতায় কবি জীবন প্রকৃতির প্রতি তীব্র আসক্তি বােধ করেছেন। যেমন-
‘আমারে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল।
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
বনলতা সেন কবিতা pdf ডাউনলোড করুন
আরও দেখুনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ৭টি বই (বুকরিভিউ)