প্রশ্নফাঁস নিয়ে যা বললেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান
চ্যানেল 24 এর অপরাধ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান এর সার্চলাইটের অনুসন্ধানে এবার উঠে এলো বুয়েট শিক্ষকের নাম। বুয়েটের IPE বিভাগের হেড প্রফেসর নিখিল রঞ্জন ধর এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি প্রেস থেকে এক প্রশ্নপত্রের কপি ব্যাগে ভরে নিতেন, যেটি আইনত দণ্ডনীয়। তবে তিনি বলছেন, প্রশ্ন চেক করে তিনি ময়লার বাক্সে ফেলে দিতেন। এতে বুয়েট এর শিক্ষককের পাশাপাশি বুয়েটকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন যা হুবহু তুলে ধরা হলো — প্রশ্নপত্র ফাঁস, বুয়েট শিক্ষক এবং অন্যান্য…
[★★★] আরোও পড়ুনঃ অপরাজিতা ফুলের চায়ের উপকারীতা
[★★★] আরোও পড়ুনঃ ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ইনকাম করার ৫ টি উপায়
[★★★] রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর দিলাম জাতিকে,ছেলেপেলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করল। ৮৭ জন আজীবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হলো। দ্বিতীয়বার তো উপাচার্য স্যার আমার কাছ থেকে সকল তথ্য-প্রমাণ নিয়ে পরীক্ষাই নিলেন আবার!
মেডিকেলের বেলাতেও তাই। প্রেস থেকে কিভাবে এবং কারা প্রশ্ন ফাঁস করতো সে খবর প্রচারের পর এই খাতসংশ্লিষ্ট সবাই তাদের ধিক্কার জানিয়েছে। এদিকে বুয়েটের বেলায় দেখছি উল্টো ঘটনা। একজন ব্যক্তি বিশেষের দায়কে তারা ইন্সটিটিউশনাল প্রাইডের যায়গা থেকে দেখছেন এবং শিশুসুলভ যুক্তি দিয়ে তাকে ডিফেন্ড করছেন! কিন্তু কেন?
আমাদের উত্থাপিত অভিযোগের উদ্দেশ্য কিন্তু সকলের গর্বের বুয়েটকে খাটো করা নয়, বুয়েটের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের সামগ্রিক নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই ছিল অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা বুয়েটের ওই শিক্ষকের নাম যেমন বলেছে, তেমনি এই ঘটনার পূর্বাপর আচরণেও স্যারের অপরাধ ও দায়ের সাক্ষ্য পাওয়া যায়।
নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর আগে-পরে তার অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেন, সম্পদ অর্জন, স্বল্প টাকার খামে স্টিকার লাগানোর মামুলি কাজে মরিয়া হয়ে অংশগ্রহণ,ব্যাগে ভরে প্রশ্ন নিয়ে আসার নিজ স্বীকারোক্তি, আমাদের প্রশ্নের মুখে একেকবার একেক তথ্য দেওয়ার প্রবণতা- ড. নিখিলের অপরাধ-আচরণকে আরও জোড়ালো করে তোলে। সচেতন মানুষ মাত্র সেটি বুঝতে পারবেন। এমনকি তিনি কোর পরীক্ষা কমিটিতেও নেই!
সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা মেনে আমরা স্যারকে আত্মপক্ষ সমর্থণের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তিনি সে সুযোগ নেননি। ক্যামেরা দেখে যে আচরণ করেছেন, তাও রীতিমতো বিস্ময়কর। আমাদের কাছে স্যারের আরও ৩০ মিনিটের কথোপকথোনের রেকর্ড আছে। তাতে তিনি শুরুতে শিক্ষকতার মাধ্যমে সামান্য আয় হয় বলে দাবী করেন। এমন কি আহসানউল্লা তাকে অনেক পরীক্ষায় টাকা দেয়নি বলে জানান। জানতে চাইলে, তার আয়ের আর তেমন কোনো উৎস নেই বলেও দাবী করেন। অথচ আমাদের কাছে থাকা একটি ব্যাংকের মাত্র ৬ বছরের হিসাবে (যে সময়গুলোতে তিনি পরীক্ষার কাজে যুক্ত ছিলেন) প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেনের কথা বললে সেটিও তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন।
হাতে থাকা প্রমাণ দেখাতেই ৩৬০ ডিগ্রী উল্টে গিয়ে বলেন, এসব টাকা তিনি বিদেশ থেকে এনেছেন এবং ১০ কোটি টাকা লেনদেন এবং সর্বশেষ ৩ বছরে দুই কোটি টাকার এফডিআরের কথাও তখন স্বীকার করেন। যদিও স্টেটমেন্টে বিদেশ থেকে টাকা আসার কোনো চিহ্ন নেই।
আমাদের রিপোর্টে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় স্যারের অপরাধ ও দায়ের স্বরুপ উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে অস্বাভাবিক লেনদেন একটি কম্পোনেন্ট মাত্র। মূলত প্রশ্নপত্র ছাপার পর তিনি তা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেন, (যেটি তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন), যে আচরণকে অকল্পনীয় বলছেন সংশ্লিষ্ট মহল। লাখ লাখ বেকারের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছেন, তাদের প্রত্যেকে আইনের আওতায় আসুক, জড়িতদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় নয়, তার কৃতকর্মের দায়টুকু আমলে নেওয়া হোক।
~ আবদুল্লাহ আল ইমরান