তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বই রিভিউ – গুরুদত্ত সিং
গুরুদত্ত সিং,জন্ম ভারতে। নাম দেখে মনে হবে ব্যাপার কী, তিনি আবার কেন নবীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে বই লিখতে যাবেন। আপনি হয়তো জানেন না, কতশত বিধর্মী নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। সেই প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া একজন হলেন গুরুদত্ত সিং, তার লেখা বইটি ‘তোমাকে ভালোবাসি হে নবী’ নামে অনুবাদ করেছেন মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ।
শিরোনামঃ তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বই রিভিউ – গুরুদত্ত সিং
বই | তোমাকে ভালোবাসি হে নবী! |
লেখক | গুরুদত্ত সিং |
অনুবাদ | মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ |
প্রথম প্রকাশ | জুলাই, ১৯৯৮ ঈসাঈ |
প্রচ্ছদ – | বশির মিছবাহ |
হাদিয়া | ৬৫ টাকা মাত্র |
পৃষ্ঠা | ১০৮ |
🔷🔷 গুরুদত্ত সিং লেখক পরিচিতি
মুসলিম মন স্বভাবতই নবীপ্রেমে ব্যাকুল। প্রিয় মুহাম্মদ তাদের হৃদয়ের মধ্যমণি । কিন্তু একজন অমুসলিম মন তার জন্য পাগলপারা! তার ভালবাসায় সিক্ত সহস্র মাইল দূরের এই ভারত ভূমিতে বসে। পাঠক! হ্যা তিনিই ‘’রাসুলে আরাবীর’ লেখক গুরুদত্ত সিং ( দারা, বি এল,বার এট ল’)। প্রিয় রাসুলের ভালোবাসায় সিক্ত তার মনের সকল আকুতি, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ফুটে উঠেছে তার “রাসুলে আরাবী’’ গ্রন্থে যার বাংলা অনুবাদ তোমাকে ভালোবাসি হে নবী।
📙📙 বইটির প্রাথমিক পর্যালোচনা
বইটি সাজানো আছে ৫টি অধ্যায়ে, ১ম’টি ছিল রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে তার হৃদয়ে জমে থাকা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। উচ্চমানের সাহিত্য দ্বারা ভরপুর ছিল প্রতিটা বাক্য। যে কেউ পড়লে বুঝতে পারবে যে একজন বিধর্মী রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতটুকু ভালোবাসতে পারে। বাকী অধ্যায়গুলোতে রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্মের আগে থেকে শুরু করে তার বেড়ে উঠা, বিবাহ, নবুওয়ত, মক্কার দিনগুলো থেকে শুরু করে হিজরত ও মদিনার জীবন-যাপন, যুদ্ধ, সন্ধি ও রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যু পর্যন্ত স্থান পেয়েছে। ঘটনা বা কথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি মুসলিমদের ও বিধর্মীদের কাছে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন এবং রাসুলুল্লাহকে নিয়ে যারা মিথ্যাচার করে তাদেরকে কিছু স্থানে জবাব দিয়েছেন। তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বইটির সূচীপত্র —
হৃদয়ের আকুতি // ১
(কেমন ছিলেন তিনি ? আরব জাতির কী সৌভাগ্য! দুর্ভাগা ভারতমাতার বিলাপ-রাসূলে আরাবী সমীপে মিনতি)
প্রথম অধ্যায় // ৫
(নবীর খান্দান – আব্বার মৃত্যু – আব্দুল মুত্তালিবের শােক – গায়বের সান্ত্বনা ** শুভাগমন – আব্দুল মুত্তালিবের আনন্দ – বিবি আমেনার আনন্দ – নামকরণ ** শুভাগমন – আব্দুল মুত্তালিবের আনন্দ – বিবি আমেনার আনন্দ – নামকরণ **** দুধপান – মা আমেনার অগ্নিপরীক্ষা – মা আমেনার মৃত্যু – দাদার মৃত্যু – এতীম হওয়ার রহস্য – আবু তালিবের আশ্রয় ** দুধপান – মা আমেনার অগ্নিপরীক্ষা – মা আমেনার মৃত্যু – দাদার মৃত্যু – এতীম হওয়ার রহস্য – আবু তালিবের আশ্রয় **** ব্যবসায় হাতেখড়ি – সততা ** ব্যবসায় হাতেখড়ি – সততা ** হযরত খাদীজার হৃদয়ে – বিবাহের প্রস্তাব – শুভ বিবাহ – হযরত খাদীজা ও নবীজীর সম্পর্ক)
দ্বিতীয় অধ্যয় // ২৪
(পূর্বাভাস – ক্রীতদাস যায়দের মুক্তি – কোরেশের বিবাদের মীমাংসা ** হেরাগুহার সাধনা – অহী লাভ – বিবি খাদীজার ইসলাম গ্রহণ ** হেরাগুহার সাধনা – অহী লাভ – বিবি খাদীজার ইসলাম গ্রহণ **** প্রকাশ্রে সত্যের আহ্বান – কোরেশের আচরণ – আবু তালিবের সামনে নবীজীর বক্তব্য ** প্রকাশ্রে সত্যের আহ্বান – কোরেশের আচরণ – আবু তালিবের সামনে নবীজীর বক্তব্য **** কোরেশের পক্ষ হতে প্রলােভন – হজরতের জবাব – শুরু হলাে নিষ্ঠুরতা ** কোরেশের পক্ষ হতে প্রলােভন – হজরতের জবাব – শুরু হলাে নিষ্ঠুরতা **** হাবশায় হিজরত ** হাবশায় হিজরত **** নাজ্জাশীর দরবারে কোরেশদূত – মুহাজিরদের বক্তব্য ** নাজ্জাশীর দরবারে কোরেশদূত – মুহাজিরদের বক্তব্য **** চরম নির্যাতন – নবীজীর অটলতা ** চরম নির্যাতন – নবীজীর অটলতা **** হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণ – হযরত হামযার ইসলাম গ্রহণ ** হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণ – হযরত হামযার ইসলাম গ্রহণ ****বিবি খাদীজার ইনতিকাল – প্রিয় চাচার মৃত্যু **** তায়েফে গমন – তায়েজীদের প্রতি নবীর দয়া ** তায়েফে গমন – তায়েজীদের প্রতি নবীর দয়া **** মক্কায় ফিরে কোরেশের বাধা – মুতইমের আশ্রয়দান ** মক্কায় ফিরে কোরেশের বাধা – মুতইমের আশ্রয়দান ** গােত্রপ্রধান তােফায়লের ইসলাম গ্রহণ)
তৃতীয় অধ্যায় // ৬০
(হত্যার চক্রান্ত – মদীনায় হিজরত – নবীর শয্যায় হযরত আলীর শয়ন – ছাওর পাহাড়ের গুহায় তিন দিন – নবীর শুভাগমনে মদীনার আনন্দ – হযরত আবু আইয়ুবের মেহমান ** জিহাদ কেন? মদীনার মুনাফিকসরদার ** জিহাদ কেন? মদীনার মুনাফিকসরদার ** আবু সুফয়ানের কাফেলা –
আবু জেহেলের মৃত্যু – যুদ্ধবন্দীদের প্রতি নবীজীর আচরণ ** বদর যুদ্ধের পর ** বদর যুদ্ধের পর **** শত্রুর প্রতি ক্ষমার একটি নমুনা ** শত্রুর প্রতি ক্ষমার একটি নমুনা **** অহুদের যুদ্ধ – প্রিয় চাচা হামযার শাহাদাত ** অহুদের যুদ্ধ – প্রিয় চাচা হামযার শাহাদাত **** মদীনায় ইহুদীদের বিরুদ্ধে অভিযান – বন্দী ইহুদীদের প্রতি দয়া ** মদীনায় ইহুদীদের বিরুদ্ধে অভিযান – বন্দী ইহুদীদের প্রতি দয়া ** খন্দকযুদ্ধ)
চতুর্থ অধ্যায় // ৯৪
(হােদায়বিয়ার সন্ধি ** বিভিন্ন দেশে দাওয়াত * বিভিন্ন দেশে দাওয়াত ** খায়বারযুদ্ধ – হযরত আলীর বীরত্ব – ইহুদীনারীর চক্রান্ত ** খায়বারযুদ্ধ – হযরত আলীর বীরত্ব – ইহুদীনারীর চক্রান্ত **** তিনদিনের জন্য আল্লাহর নবী মক্কায় ** তিনদিনের জন্য আল্লাহর নবী মক্কায় **** মুতার যুদ্ধ – তিন সেনাপতির শাহাদাত – হযরত খালিদের বীরত্ব ** মুতার যুদ্ধ – তিন সেনাপতির শাহাদাত – হযরত খালিদের বীরত্ব **** মক্কা অভিযান – নবীজীর দরবারে আবু সুফয়ান মক্কা অভিযান – নবীজীর দরবারে আবু সুফয়ান মক্কায় প্রবেশ – সাধারণ ক্ষমা – শীর্ষ অপরাধীদের ক্ষমা **** হােনায়নের যুদ্ধ – হাওয়াযিনদের প্রতি দয়া ** হােনায়নের যুদ্ধ – হাওয়াযিনদের প্রতি দয়া **** দাতা হাতিমের কন্যার প্রতি দয়া ** দাতা হাতিমের কন্যার প্রতি দয়া ** বিদায় হজ্জ – চিরবিদায়ের মুহূর্তে – শেষ মিনতি)
📖📖 তোমাকে ভালোবাসি হে নবী : মূল্যায়ণ
অসাধারণ ভাষাশৈলী এবং শব্দ চয়নে সচেতন পাঠক মাত্রই মুগ্ধ হতে হয়। গ্রন্থজুড়ে লেখকের অসংখ্য আক্ষেপ। মক্কাবাসীর নিষ্ঠুর আচরণে অমুসলিম মনেও গভীর রেখাপাত করে। তার নমুনা-
‘’’হে আমেনার দুলাল! হে প্রিয় মুহাম্মাদ! মক্কার নির্বোধ কোরেইশ তোমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কিন্তু ভারতমাতা একবার যদি লাভ করত তোমার পবিত্র পদধূলি তাহলে চন্দ্রধূলি রূপে সে তা কপালে মেখে ধন্য হত”’।
মক্কাবিজয়ে নবী কারীম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসীম মহানুভবতায় মুগ্ধ লেখকের প্রতিক্রিয়া এমন –
“‘তোমরা যারা দেশের পর দেশ পদানত করে,জনপদ ধবংস করে এবং নিরিহ মানুষের রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করে বিজয় উল্লাস করো- তারা মক্কা বিজয়ী মুহাম্মদের ﷺ সামনে আনত মস্তকে একবার এসে দাঁড়াও ! শিক্ষা গ্রহণ করো কেন যুদ্ধ করবে! কিভাবে যুদ্ধ করবে! দেশ জয়ের পর কিভাবে তাদের আত্মার উপরেও বিজয় লাভ করবে, তাহলে মানব সভ্যতার কলংক না হয়ে হতে পারবে তার গর্ব ও গৌরব।”‘
প্রিয় রাসুলের জীবনি লিখতে গিয়ে এক পর্যায়ে লেখক অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন নিজের অক্ষমতা ও দূর্বলতার কথা –
“‘প্রিয় পাঠক! আমার কলমের অক্ষমতা ক্ষমা করো, স্ব-স্ব বুদ্ধি বিবেচনা ও অনুভূতি কে কাজে লাগিয়ে যে যতটুকু পারো তার থেকে শিক্ষা নিতে পারো। আমার আর কিছু বলার ও লিখবার শক্তি নেই।”‘
লেখক গুরুদত্ত সিং দীর্ঘ লেখা শেষে হযরতের সমীপে করেছেন তিনি হৃদয় নিঙড়ানো প্রার্থনা –
“‘হে আরবের দুলাল! হে প্রিয়তম মুহাম্মদ ﷺ! বড় দ্বিধা-সংকোচ লাজ-শরম নিয়ে কলম তুলেছি তোমার কথা লিখব বলে। যদি তাতে মনের বিরহ জ্বালার কিঞ্চিৎ উপশম হয়। ক্ষমা করো।”‘
“‘প্রিয়তম আহমদ! কখনো অন্যলোকে যদি দেখা হয় ,আর আমি যদি স্বীয় পাপের ভারে ডুবে যাই তখনকি আমাকে তুমি চিনবে না! কাছে টেনে নিবে না! সে আশায় বুক বেধে আছি। হে প্রিয়তম।”‘
লেখকের দোয়া বিধাতা কবুল করুন। বিশ্বাস করুন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের জীবনী পড়ে তার আদর্শ অনুযায়ী জীবন না গড়তে পারলে এই জীবনের কোন দাম নেই।
★★★ পাঠ্য অনুভূতি
লেখক তার মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে গিয়েছেন। অনুবাদকও যে সেই মাধুরী ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাকে যদি কখনো জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কোনো বই পড়ে কেঁদেছেন, আমি বলব, হ্যাঁ। বইটির নাম অকপটে উচ্চারণ করবো ‘তোমাকে ভালোবাসি হে নবী!’ আমরা যারা জেনারেল লাইনের শিক্ষার্থী তাদের ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে প্রতি শ্রেণিতে মুহাম্মদ (সা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী থাকে। আমরাও একদম সাল, নাম, হিজরী সব মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে চলে যাই। কিন্তু আমাদের সবার প্রিয় মানুষটির জীবনকে উপলব্ধি করাতে ওই লেখাগুলো যথেষ্ট ছিল না।
পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা বইটা কিন্তু মহানবী (সা.) এর জীবনী। অন্যান্য জীবনীগুলোও অনেক বড়। তাই, যারা সীরাত পড়তে ছোট বই খুঁজছেন তাদের জন্য আদর্শ এই বইটি। তোমাকে ভালোবাসি হে নবী! বইটি ছোট হলেও অনেক বড় বড় বইকেও তুলনায় হারিয়ে দেয়ার যোগ্যতা রাখে, সে ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
লেখকের কলমের মাধুরী আমাকে বার বার অবিশ্বাস করায় যে না এ তো গুরুদত্ত সিং নয়, এ যেন এক ‘ আশেকে রাসুল’। আমি জানি না এই লোক পরলোকগমনকালে কি অবস্থায় ছিলেন, তবে তিনি যে ইসলামের প্রতি একজন বিশিষ্ট অনুরাগী ব্যক্তি ছিলেন তা যারা এই বইটি পড়েছেন খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন।
সর্বপরি, এটি খুবই ভালো বই। বিশ্বাস করুন, আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত এর গভীরতা এর মাহাত্ম্য বুঝতে সক্ষম হবেন না, যতক্ষণ না আপনি বইটা পড়ছেন।
বইটি ডাউনলোড করুণঃ তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বই রিভিউ। তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বই পিডিএফ। তোমাকে ভালোবাসি হে নবীpdf।
তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বই ডাউনলোড