ছড়া কি বঙ্গ জার্নাল।

ছড়া কি? ছড়ার সংজ্ঞা সহ বিস্তারিত আলোচনা

বাংলার লােকসাহিত্যের একটি বিশিষ্ট সম্পদ হলাে ছড়া। যুগে যুগে এটি বহু সংগ্রাহক- সংকলক ও সম্পাদককে আকর্ষণ করেছে। এর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিচয় এত সুস্পষ্ট যে, লােকসাহিত্যের অন্যান্য বিষয় থেকে স্বতন্ত্ররূপে চিহ্নিত। শ্ৰী আশুতােষ ভট্টাচার্য্য বলেছেন- ‘ইহা সমগ্রভাবে ব্যক্তি কিংবা সমাজের সচেতন মনের সৃষ্টি নহে, বরং স্বপ্নদর্শী মনের অনায়াস সৃষ্টি। ইহার বহিরঙ্গগত পরিচয়-সম্পর্ক ও এই কথা বলিতে পারা যায় যে, ইহার শিল্পরূপও ব্যক্তি কিংবা সমাজের কোনাে সচেতন প্রতিভার সৃষ্টি বলিয়া কদাচ ভুল হইতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছেলে-ভুলানাে ছড়া’

প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘আমি ছড়াকে মেঘের সহিত তুলনা করিয়াছি। উভয় পরিবর্তনশীল, বিবিধ বর্ণে রঞ্জিত, বায়ু স্রোতে-যদৃচ্ছা ভাসমান। দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক। ছড়াও কলাবিচার শাস্ত্রের বাহির, মেঘ বিজ্ঞান শাস্ত্র নিয়মের মধ্যে ভালাে করিয়া ধরা দেয় নাই অথচ জড় জগতে এবং মানব জগতে এই দুই উদ্ধৃঙ্খল অদ্ভূত পদার্থ চিরকাল মহৎ উদ্দেশ্যে সাধন করিয়া আসিতেছে।’ প্রাচীন লােকসাহিত্যের অন্তর্মূলে ছড়ার জন্ম, লালন ও বিকাশ ঘটলেও বর্তমানে তা সাহিত্য বা ভাবপ্রকাশের একটি আধুনিক রূপ।

আরও পড়ুনঃ বাংলার লােকছড়া কি ? লোকছড়া কাকে বলে ?

আধুনিককালে ছড়া লােকসহিত্যের ঐতিহ্যের ধারাকে অতিক্রম করে ছেলে ভুলানাের ‘মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের গণ্ডিকে ডিঙ্গিয়ে এক নতুন রূপ লাভ করেছে। অনেক কবি সচেতনভাবে ছড়া রচনা করছেন। শিশু মনােরঞ্জন নিমিত্ত রচিত এক প্রকার ছন্দোবদ্ধ পদ্য রচনার কথা কবি মানসপটে উদিত হয়।

কেননা এগুলাে শিশুতােষ রচনা । কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে ছড়া কেবল শিশুর জন্য রচিত হয়নি, শিশু-কিশাের, যুবক- বয়স্ক সব শ্রেণির জন্যে রচিত হয়েছে সমাজে বিভিন্ন স্তরের নরনারী বিভিন্ন উপলক্ষে ছড়াচর্চা করে থাকে। এজন্য প্রতিনিয়ত ছড়ার গ্রহণযােগ্যতা বাড়ছে, লাবণ্য বিকশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ছড়ার উৎপত্তির ইতিহাস? 

ছড়া কি ছড়ার উৎপত্তি “হুড়া’ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য বর্তমান। কারও মতে শব্দটি সংস্কৃত মূল কারও মতে দেশজ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ছড়া’ শব্দের ব্যুৎপত্তি | নির্ণয় করেছেন এভাবে- সংস্কৃত-ছটা > প্রাকৃত-ছড়া > প্রা, ম-ছিটা > ছড়া 

রাজশেখর বসু, যােগেশচন্দ্র রায় প্রমুখ পণ্ডিত এই মতের সমার্থক। অপরদিকে নগেন্দ্রনাথ বসুর মতে ‘ছড়া’ শব্দটি দেশজ। বিভিন্ন অভিধান গ্রন্থে এই শব্দটিকে গ্রাম্য কবিতা অর্থেই বােঝানাে হয়েছে। ওয়াকিল আহমদ বলেছেন- ‘ছট’ শব্দ থেকে ছড়া শব্দের উৎপত্তি বলে গণ্য করা হয়। অর্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে- ছিটিয়ে থাকা। ছড়ার ভাব বা চিত্র রাশি অসংবদ্ধ অবস্থায় থাকে এরূপ ধারণা থেকে এরূপ নামকরণ হয়েছে। ‘ছড়া’ সংস্কৃত থেকে আসতে পারে ।

ছটা সংস্কৃত > ছড়া প্রাকৃত > ছড়া দেশজ যার অর্থ পরম্পরাসমূহ,

গ্রাম্যকবিতা ইত্যাদি। অভিধানকারগণও ছড়া বলতে ‘গ্রাম্য কবিতাকেই বুঝিয়েছেন। কবি গান, তরজা পাঁচালির আসরে তাৎক্ষণিকের প্রয়ােজনে বাদানুবাদে ছড়া কাটা হতাে। দৈনন্দিন জীবনে, গার্হস্থ্য বিষয়ে, হাসি-কান্না, ঝগড়া বিবাদ, সামাজিক-পারিবারিক উৎসব, অনুষ্ঠান, পার্বণ, অবসর বিনোদন প্রভৃতি সময় ছড়া বলা হয়। মুখে মুখে রচিত অথবা কণ্ঠস্থ এই সমস্ত বিষয়ই গ্রাম্য কবিতা। অর্থাৎ গ্রাম্য কবিতা বা ছড়ার ব্যবহার লােকভাষাতেই ছিল। অবশ্য তখনকার দিনে ছড়া বলতে শ্লোক’ ‘ছিকলি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হতাে।

আপনার জন্যেঃ লােককথা কি লোক কথা কাকে বলে?

ছড়ার কাল নির্ণয়

ছড়ার কাল নির্ণয় ছড়ার কাল নির্ণয় করা কঠিন। কারণ মৌখিক সাহিত্য প্রায়শ পরিবর্তনশীল।এ বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত : লােকবিজ্ঞানী M. Bloomfield-ছড়া হচ্ছে মানুষের striking example of the poetic primitive’ যার সূচনা almost of the primitive archaic’ কালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে ‘বাংলা ছেলে ভুলানাে ছড়া শিশুর মতাে পুরাতন, তাহারা মানব মনে আপনি জন্মিয়াছে।’ ডক্টর-সুকুমার সেন ‘আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৯৫০ সাল।’ দীনেশচন্দ্র সেন-‘১০০০ বছরেরও অনেক পূর্ববর্তী। ‘সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়-‘প্রায় ১০০০ বছর। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-৬ষ্ঠ শতকের মধ্যভাগ। তিনি আরাে বলেন, কতকগুলি ছড়া বাঙালার মুসলমানি আমলের পূর্বের। অনেকের মতে-বর্তমানে লিপিবদ্ধ ছড়াগুলাের পাঠ বা ভাষা পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্ববর্তী নয়। তবে এটা তার লিপির বা সে-পাঠ অনুসারে লিপিবদ্ধ করার কাল; উদ্ভবের কাল লিপিবদ্ধ করার কাল থেকে অনেক প্রাচীন।

ছড়ার সংজ্ঞা 

ছড়া কি বা ছড়ার সংজ্ঞা লােকসাহিত্যের প্রাচীনতম সৃষ্টি ছড়াগুলাে বিশেষ কোনাে ব্যক্তির সৃষ্টি বলে মনে করা যায় না। এর সৃষ্টির পেছনে সমষ্টিমনের প্রভাব কার্যকর। সমাজের সাধারণ মানুষের আবেগ, কল্পনা, স্বপ্ন, স্মৃতি, অভিজ্ঞতার কথা পদ্যের ভাষায় ছন্দের বন্ধনে ক্ষুদ্র অবয়বে যে বাঅয় রূপ লাভ করে তাই ছড়া।

ছড়ার সংজ্ঞা নির্ণয় করা দুরূহ। ছড়ার ইংরেজি প্রতিশব্দ (Rhyme; standard Dictionary of Folklore, Mythology and Legends (1949) AC Rhyme to আলাদা বিবরণ নেই; Nursery rhyme শব্দের অন্তর্ভুক্তি আছে, কিন্তু সংজ্ঞা নেই । Encyclopedia Britannica (Vol. VII) 269 Nursery Rhymes TTCF Turf 27369- Verses Customarily said or sung to small children”,

প্রথাগতভাবে শিশুদের কাছে যে পদ্য পাঠ বলা বা গান করা হয় তাই ছড়া । রবীন্দ্রনাথ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন-“ইহার মধ্যে ভারের পরস্পর সম্বন্ধ নাই, ..কতকগুলাে অসংলগ্ন ছবি নিতান্ত সামান্য প্রসঙ্গ সূত্রে অবলম্বন করিয়া উপস্থিত হইয়াছে।

গাম্ভীর্য নয়, অর্থের মারপ্যাচ নয়, সুরময়, ধ্বনিই ছড়ার প্রাণ।” সুকুমার সেন : ‘লােক সাহিত্যের যে শাখাটি অন্তপুরের আঙিনায় স্নিগ্ধছায়া বিস্তার করেছে তা ঘুমপাড়ানি ও ছেলে ভুলানাে ছড়া। এই ধরনের ছড়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সর্বদেশের সর্বকালের আদিম কবিতার বীজ; বাণীর প্রথম অঙ্কুর। আশুতােষ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘যাহা মৌখিক আবৃত্তি (recite) করা হয়, তাহাই ছড়া যাহা তাল ও সুরসহ গান করা যায়, তাহাই সঙ্গীত ।…ছড়ার সুর বৈচিত্র্যহীন, সঙ্গীতের সুর বৈচিত্র্যময় ।

ছড়ায় কোনাে কাহিনীও থাকে না; ইহার মধ্যে যাহা থাকে, তাহাকে চিত্র বলিতে পারা যায়; কিন্তু সেই চিত্রও স্বয়ংসম্পূর্ণ নহে,…. ছড়ায় অপরিচিত বিদেশি শব্দ কদাচ ব্যবহৃত হয় না। ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর মতে : ‘মৌখিক আবৃত্তির জন্য মুখে মুখেই যাহা রচিত হয়, তাহাই ছড়া।’ আতােয়ার রহমান বলেন : ‘অর্থ এবং বাস্তবের দিক থেকে অসংলগ্ন বা ধারাবাহিকতাহীন কিছু চিত্রের মাধ্যমে একটি কল্পনালােক সৃষ্টির ছন্দিত প্রয়াসই ছড়া। আলমগীর জলিল : ছড়িয়ে আছে বলেই ছড়া ।

ভাব ভাবনার যখন স্পষ্ট দানা বাঁধেনি, ভাষা যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটি-হাঁটি পা পা করে চলতে শিখতে কেবল অভ্যস্ত হতে চলেছে, জটিলতা যখন পর্যন্ত গ্রন্থি আঁটতে শেখেনি, সহজ ও স্বতঃস্ফুর্ত আনন্দের রশ্মি যখন মনকে দোলা দিচ্ছিল তখনই এই ছড়াগুলির প্রথম সৃষ্টি।”২ মুখে মুখে আবৃত্তির জন্য যা রচিত তাই ছড়া, এমন একটা প্রচলিত ধারণা থাকলেও ছড়া মাত্রই আবৃত্তি করা হয় না, গাওয়াও হয়। অনেক সময় আবার স্বল্প সুরের আভাস ফুটিয়ে গান ও আবৃত্তির মধ্যবর্তী একটা অনুসরণ সৃষ্টি করা হয়ে থাকে।

ছড়ার বৈশিষ্ট্য কি কি ?

ছড়ার বৈশিষ্ট্যছড়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে, অকারণ তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত নয়, এর একটি অংশের সঙ্গে আর একটি অংশ সহজেই লগ্ন হয়ে যায়। ফলে একই ছড়ার মধ্যে ভাব ও চিত্রগত বিভিন্নতা দেখা যায়। যদিও রসগত অখণ্ডনীয়তা বজায় থাকে।

বাংলা ছড়ার বৈশিষ্ট্যসমূহকে সংক্ষেপে নিম্নরূপে উপস্থাপন করা যায় :

১. ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত বা বিশিষ্ট ভাব কিংবা ভাবের পারম্পর্য নেই

২. ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকে না।

৩. ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী। |

৪, ছড়ায় রস ও চিত্র আছে, তত্ত্ব ও উপদেশ নেই ।

৫. ছড়ার ছন্দ শাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ।

৬. ছড়া বাহুল্য বর্জিত, দৃঢ়বদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত ।

৭, ছড়ার ভাষা লঘু ও চপল।

৮, ছড়ার রস তীব্র ও গাঢ় নয়, স্নিগ্ধ ও সরস।

এই বৈশিষ্ট্যসমূহকে ভিত্তি করে বলা যায় : ছড়া হলাে লঘু, ভাষায় ও প্রাকৃত ছন্দে বন্ধ আনুপূর্বিকভাব ও কাহিনীবিহীন ধ্বনি, রস বা চিত্রপ্রধান সুরাশ্রয়ী সংক্ষিপ্ত সমিল।

ড, ওয়াকিল আহমদ বলেছেন-ছড়ার কতকগুলাে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে;

১. ছড়া- মূলত আবেগ অনুভূতিজাত বুদ্ধিপ্রসূত নয়।

২. ছড়া চর্চায় সব বয়সের নর-নারীর অংশগ্রহণ করে।

৩. ছড়ায় বিষয় বৈচিত্র্য আছে লঘুগুরু সব ধরনের বিষয় এবং হাস্য-নি ব্যঙ্গ করুণ-শান্ত নানা ধরনের রস নিয়ে ছড়া হয়।

৪. ছড়ার নিজস্ব ছন্দ আছে যা ‘ছড়ার ছন্দ’ বা ‘স্বরবৃত্ত ছন্দ’ নামে পরিচিত।

৫. ছড়া আবৃত্তি সুখকর।

৬. ছড়ার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি সহজ-সরল প্রত্যক্ষ; কৃচিৎ হেঁয়ালির ভাষা ব্যবহৃত হয়।

৭. ছড়া চিত্রবহুল ও ধ্বনি স্পন্দিত বলে স্মৃতিতে ধরে রাখা সহজ হয়।

৮. ছড়া চিত্তবিনােদনের নির্মল মাধ্যম; কোনাে কোনাে ছড়ায় গ্রাম্যতা থাকলেও অশ্লীলতা নেই।

৯. ছড়ার মধ্যে ‘চিরত্ব’ আছে। পৃথিবীর সব দেশে সব সমাজে ছড়া আছে; এই সর্বজনীনতার ও সর্বকালীনতার গুণে ছড়া পুরাতন হয়েও চির নতুন।

১০. ছড়া জীবন্ত ও আন্তর্জাতিক। নাজমুল হক বলেছেন,

কিংবদন্তি অর্থ কি? কিংবদন্তি মানে কি

ছড়ার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলাে-

১. ছড়ার বুদ্ধি প্রবণতার চেয়ে আবেগ অনুভূতির প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।

২শিশুদের উপযােগী মনে করা হলেও ছড়াতে সকল বয়সী নারী-পুরুষই- অংশগ্রহণ করে।

৩. বিষয়ের দিক থেকে ছড়া বৈচিত্র্যধর্মী ।

ছড়ার আছে গতিশীল শ্রুতিমধুর ও নিজস্ব ছন্দ। ছড়ার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, এর একটির অংশের সঙ্গে আর একটির অংশ অতি সহজেই জুড়ে যায়, তার ফলেই একই ছড়ার মধ্যে ভাব ও চিত্রগত বিভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। ছড়ার পদগুলাে পরস্পর সুদৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ নয়, বরং নিতান্ত অসংলগ্ন; সেজন্য একটি পদ হতে আর একটি পদ যেমন সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে,

তেমনই বিভিন্ন স্থান হতে নতুন নতুন পদ এসেও নতুন ছড়ার অঙ্গে জুড়ে যেতে পারে । রবীন্দ্রনাথের সংগ্রহে একটি ছেলে খেলার ছড়া এই প্রকার- আয়রে আয় ছেলের পাল মাছ ধরতে যাই। মাছের কাঁটা পায়ে ফুটল দোলায় চেপে যাই। দোলায় আছে ছ’পন কড়ি গুণতে গুণতে যাই৷৷ এ নদীর জলটুকু টলমল করে। এ নদীর ধারেতে ভাই বালি ঝুর ঝুর করাে৷৷ চাঁদমুখেতে রােদ লেগেছে রক্ত ফুটে পড়ে৷৷

 ছড়ার শ্রেণিবিভাগ

ছড়ার শ্রেণিবিভাগ বাংলার লােকছড়ার শ্রেণিবিভাগ দুরত্ব এবং জটিল । যারা গুড়ার সংকলন ” আলােচনা করেছেন, তাঁরা নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে স্থাকে বিন্যাস করেছেন। গত চার পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা

দুস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন

১, মেয়েলী ছড়া,

২, ছেলে ভুলানো স্থা।

সুকুমার সেন প্রথম পর্যায়ে রবীন্দ্র-মতানুসারী হলেও পরে তিনি দুদকে নিম্নোক্তভাবে বিধাবিভক্ত করেন ।

লােকসঙ্গীত কাকে বলে ? লােকসঙ্গীত কি?

১, ঘুমপাড়ানী ,

২, মনভােলান,

৩, পেচালান।” “,

আশুতোষ ভট্টাচার্য ছড়াকে ছয় ভাগে ভাগ করেছে।

১, শিশুবিষয়ক, (ক) নিদ্রা, (খ) ছেলেখেলা, (গ) বিবিধ ।

৩, পপক্ষী-বিষয়ক।

৪, প্রকৃতিবিষয়ক (নৈসর্গিক)।

৫, সমসাময়িক ঘটনাবিষয়ক ।

৬, উপকথার ছড়া। এর সঙ্গে অবশ্য কয়েকটি উপ-বিভাগও আছে ।

মােহাম্মদ সিরাজুদ্দিন কাসিমপুরী কৃত বিভাগ তুলনামূলকভাবে বিস্তৃততর ।

দুস্থাকে তিনি তিনভাগে ভাগ করেছেন

১, শিশুবিষয়ক ছড়া । (ক) গোসল করাইবার ছড়া, (খ) দুধ খাওয়াইবার ছড়া, (গ) পুন পাড়াইবার দু বা গান, (ঘ) শিপ্তর শিক্ষাদান ও আনন্দ বনের ছত্যু ।

২, খেলাধুলা ও আমােদ-প্রমােদের ছড়া । (ক) ছেলেমেয়েদের একর খেলার ছড়া, (খ) মেয়েদের পৃথক আনেদ ও পুন্যান্য মেয়েলী ছড়া, (গ) ছেলেদের পৃথক খেলা ও আমােদ-প্রমােদের গুছা, (খ) ছেলেদের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত ছড়া ।

৩, বিবিধ ছড়া । (ক) অভ্যাস-গঠনমূলক ছড়া, (খ) মিষ্টত্ববিষয়ক ছড়া, (গ) সমস্যামূলক ছড়া, (খ) প্রাকৃতিক ঘটনা-বিষয়ক ছড়া, (ঙ) গায়েনের ছড়া; (চ) মন্ত্র-তন্ত্র ও খাড়-টুকার ছড়া, (ছ) সামাজিক প্রতিক্রিয়ার ছড়া, (জ) কাজে উৎসাহ ও শক্তি পাইবার ছড়া, (ঝ) স্বাস্থ্যবিষয়ক ছড়া, (%) ব্রতের ছড়া, (ট) কৃষিবিষয়ক ছড়া ও খনার বচন, (ঠ) রূপকথায় উপকথায় ছড়া ।

people also search: ছড়া কি । ছড়া কি বা কিভাবে তৈরি হলো । বাংলা ছড়া কি । ছড়া কি ছোটদের নাকি বড়দের ।