চাঁদের পাহাড় বই রিভিউ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

চাঁদের পাহাড় pdf

চাঁদের পাহাড় বই রিভিউ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

গত কাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে।মধ্যরাত পর্যন্ত মেঘে ডেকেছে।আজকে সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা।আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে আগামি কয়েকদিন বাংলাদেশে নিম্মচাপ চলবে।আর এরকম বৃষ্টি বাদলের দিনে পড়ে শেষ করলাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস চাঁদের পাহাড়।

বইয়ের নামঃ চাঁদের পাহাড়
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ ১৯৩৭
মুদ্রিত মূল্য ১৫০ টাকা মাত্র
রিভিউ লেখক মোঃ ইসতিয়াক হোসেন (রাবি)

)

🔷🔷 লেখক পরিচিতি
বাংলা কথাসাহিত্যে সবথেকে বেশি যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অন্যতম।তিনি একাধারে একজন ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং প্রাবন্ধিক।আজও তার উপন্যাস, ছোট গল্প বহু পাঠকের অন্তর ছুয়ে মনের খোড়াক মেটায়।সেগুলোর মধ্যে পথের পাঁচালী,অপরাজিত,চাঁদের পাহাড়, আরণ্যক,আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

দারবিশ বই রিভিউ- লতিফুল ইসলাম শিবলী

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে।এই কিংবদন্তী লেখকের সাহিত্য জীবনের সূচনা হয়েছিলো একেবারেই হঠাৎ করে।বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিএ পাশ করার পর একটা স্কুলে চাকরি নেন। সেখানে লেখকের সাথে এক চমৎকার ঘটনা ঘটে।

পাঁচুগোপাল বা যতীন্দ্রমোহন রায় নামের এক দুষ্ট শিশুকবি স্কুলে একটা বিজ্ঞাপন ছাপে।বিজ্ঞাপনে বলা হয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় একটা উপন্যাস লিখছে।কিন্তু আদতে লেখকের কোনপ্রকার লেখালেখির সাথে সম্পর্ক ছিলো না তখন।সেই বিজ্ঞাপনের কারণেই লেখককে এক প্রকারের বাধ্য হয়ে প্রথম বারের মতো কলম ধরতে হয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সেবার লিখে ফেলেন তার প্রথম ছোটগল্প “উপেক্ষিতা”।তারপর সেটা পাঠিয়ে দেন কলকাতার একটা মাসিক পত্রিকায়।গল্পটি পত্রিকায় প্রকাশ হয় এবং সে বছর সেরা গল্পের খেতাব অর্জন করে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী এবং অপরাজিত বাংলা ভাষার এক অন্যতম আবিষ্কার।পথের পাঁচালী ছিলো লেখকের প্রথম উপন্যাস, যেটি ১৯২৯ সালে বই হিসেবে বের হয়।পথের পাঁচালী উপন্যাস দিয়েই লেখক তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।পথের পাঁচালী উপন্যাসকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়।এ চলচ্চিত্রের জন্য সত্যজিৎ রায় আন্তর্জাতিক বহু পুরষ্কার অর্জন করেন।

পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণায় জন্ম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইছামতী উপন্যাসের জন্য ১৯৫১ সালে মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার অর্জন করেন।লেখক একজন প্রকৃতি প্রেমী সাহিত্যিক ছিলেন।যা তার লেখার মধ্যে প্রকাশ পায়।তার লেখায় নান্দনিকতা, নিঃসঙ্গতা,প্রকৃতি এবং জীবন এক অনন্য রেখায় একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়। গুণী এই লেখক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ৫৬ বছর বয়সে পরলোক গমণ করেন।

📖 📖 চাঁদের পাহাড় : মূল্যায়ন

চাঁদের পাহাড় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এক অনবদ্য,অসাধারণ সৃষ্টি।আমার মতে বাংলা ভাষায় লেখা সবচেয়ে সেরা এডভেঞ্চারধর্মী উপন্যাস এটি।

আফ্রিকার গভীর জঙ্গল। সেই গভীর জঙ্গলের মধ্যে এক বিশাল পর্বতশ্রেণী, নাম রিখটারসভেল্ড। এ পর্বতশ্রেণী দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাপেক্ষা বন্য, অজ্ঞাত, বিশাল ও বিপদসংকুল অঞ্চল। দু একজন দুধর্ষ দেশ আবিষ্কারক আর ভৌগোলিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া কোন সভ্য মানুষ এ অঞ্চলে পদার্পণ করেনি। ঐ বিস্তীর্ণ বন, গুহা ও পর্বতের অধিকাংশ স্থানই সম্পর্ণ অজানা, তার কোথায় কি আছে কেও বলতে পারে না, তার নেই কোন ম্যাপ।

কাফির নামের উপজাতিরা এই পর্বতশ্রেণীর নাম রেখেছে চাঁদের পাহাড়।এই পর্বতশ্রেণীর মধ্যে আছে গুপ্ত হীরের ভান্ডার।তবে বুনিপ উপদেবতার ভয়ে কেও যাওয়ার সাহস করে সেখানে।বুনিপ এক দানব জন্তু, যে চাঁদের পাহাড়ের অঘোষিত শাসক।

এই পর্বতশ্রেণীতে যে আসে সে আর প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারে না।বুনিপের শিকারে পরিণত হয়।এছাড়া ভয় আছে সিংহ, চিতা,হায়নার।এ জঙ্গলের পদে পদে বিপদের হাতছানি।তবে এ ভয় থামাতে পারে না দুঃসাহসী শঙ্কর রায় চৌধুরী ও পর্তুগিজ অভিযাত্রী ডিয়েগো আলভারেজকে।ওরা বেড়িয়ে পড়ে চাঁদের পাহাড়ে হীরের ভান্ডারের সন্ধানে।ওদের এই দুঃসাহসী রোমাঞ্চ, রহস্যতাই পরিপূর্ণ অভিযাত্রার গল্পই বর্ণিত হয়েছে তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস চাঁদের পাহাড়ে।

দি আইশ্যাডো বক্স বই রিভিউ

ডিয়েগো আলভারেজ বয়সে শঙ্করের বাবার বয়সী।বাবার বয়সী হলেও এ মানুষটার তেজ,ক্ষিপ্রতা,শক্তি যেকোনো যুবকের থেকেও বহুগুণে বেশি।তার সাথে আবার যোগ হয়েছে দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা।সব মিলিয়ে চমৎকার এক চরিত্র আলভারেজ।অন্যদিকে গল্পের নায়ক শঙ্কর খেলাধুলায় দারুণ পটু।ঘোড়ায় চড়া,বক্সিং,সাতার কাটা,ফুটবল এসকল খেলায় শঙ্করের সাথে পাল্লা দেওয়ার মতো আর একজনও ছিলো না গ্রামে।উপন্যাসের মূল চরিত্রে আছে শঙ্কর রায় চৌধুরী ও ডিয়েগো আলভারেজ।শঙ্কর রায় চৌধুরী ভারতবর্ষ থেকে উঠে আসা এক সহজ সাধারণ বাঙালী যুবক।অন্যদিকে ডিয়েগো আলভারেজ দুধর্ষ এক পর্তুগীজ অভিযাত্রী।যে সারাজীবন সোনা, হীরের ভান্ডারের সন্ধানে কাটিয়েছে।

এগুলোর পাশাপাশি শঙ্করের আরেক দিকে গভীর আকর্ষণ ছিলো।সে মার্ক পোলো,রবিন্সন ক্রুসোর মত জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখতো।তার ইচ্ছে ছিলো দুঃসাহসী অভিযাত্রীর মতো অজানার সন্ধান করা।এজন্য সে বহু অলস দুপুর কাটিয়েছে বড় বড় ভূগোল আর মানচিত্রের বই পড়ে।আমাদের দেশের আকাশে যে সকল নক্ষত্র মন্ডল ওঠে তা প্রায় সবই সে চেনে।কালপুরুষ, সপ্তর্ষি,ক্যাসিওপিয়া,বৃশ্চিক, কোন মাসে কোনটা ওঠে সব ছিলো শঙ্করের নখদর্পনে।

শঙ্করের মার্ক পোলো,রবিনসন ক্রুসোর মতো দুঃসাহসী জীবন কাটানোর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয় যখন সে ব্রিটিশ রেলের কোম্পানিতে কেরানির চাকরি পায়।এ চাকরি শঙ্করকে নিয়ে যায় পূর্ব আফ্রিকায়।শঙ্করের চাকরির জায়গা নির্ধারিত হয় ইউগান্ডার মোম্বাসা শহর থেকে সাড়ে তিনশো মাইল পশ্চিমে জনমানবহীন এক মরুপ্রান্তরে।শুরু হয় শঙ্করের রোমাঞ্চকর জীবন।ভয়ানক আফ্রিকান সিংহ আর ব্লাক মাম্বা সাপের সাথে দিন কাটতে থাকে শঙ্করের।এমনকি কয়েকবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেচে ফেরে সে।কিন্তু এর পরের ঘটনা পুরোপুরিভাবে বদলে দেয় শঙ্করের জীবন।সে খুজে পায় পর্তুগিজ অভিযাত্রী ডিয়াগো আলভারেজকে।

শঙ্কর যখন আলভারেজকে জঙ্গলের মধ্যে থেকে খুজে পায় তখন আলভারেজ মৃত্যু প্রায়।শঙ্করের আশে লাশে তিনশো মাইল পর্যন্ত কোন হাসপাতাল,জনবসতি ছিলো না।তাই শঙ্কর নিজেই আলভারেজকে সেবা যত্ন করে সাড়িয়ে তোলে।শঙ্করের সেবায় সে যাত্রায় বেচে উঠে আলভারেজ।তবে অসুখের ঝোকে শঙ্করের কাছে আলভারেজ প্রকাশ করে ফেলে চাঁদের পাহাড়ের রহস্য।এরপর আলভারেজ যখন সুস্থ হয়ে উঠে তখন দুজন মিলে ঠিক করে তারা যাত্রা করবে চাঁদের পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।এখান থেকেই মূল গল্পের শুরু।যাত্রাপথে জঙ্গল আর মরুভূমিতে ওদের জন্য অপেক্ষা করে পদে পদে ভয়ানক বিপদ।কখনো উপদেবতা বুনিপের ভয় আবার কখনো বনের রাজা সিংহের ভয়।

★★★ পাঠপ্রতিক্রিয়া

উপন্যাসটি পড়ার সময় এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয়নি যে আমি বোর হচ্ছি। উল্টো এক পাতার পর আরেক পাতা বুঝে উঠার আগেই শেষ হয়ে গেছে।বাংলা ভাষায় এমন টানটান রোমাঞ্চকর উপন্যাস খুব কমই লেখা হয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকার বন জঙ্গলের এমন নিখুঁত বর্ণনা সত্যিই আশ্চর্যের। পুরো গল্প জুড়ে সিনেমার মতো একের পর এক ছবি ফুটে ওঠে মনের ভিতরে, চোখের সামনে।বিশেষ করে আমার কাছে বুনিপের চরিত্র সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

পুরো গল্পজুড়ে বুনিপ এক রহস্যময় জন্তু। যা গল্পের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দারূণভাবে বাড়িয়ে দেয়।উপন্যাসটি পড়ার সময় মনে হতে পারে বুনিপ হয়তো চুপি চুপি ঘরের আশে পাশে কোথাও চলে এসেছে!সব মিলিয়ে চাঁদের পাহাড় এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি করে পাঠকের হৃদয়ে। মদ্দা কথা যারা এখনও চাঁদের পাহাড় পড়ে নি তারা এক সুন্দর রোমাঞ্চকর অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রহস্য, রোমাঞ্চের খুব কড়া স্বাদ রয়েছে উপন্যাসটিতে।

চাঁদের পাহাড় বই রিভিউ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ডাউনলোড লিঙ্ক , এই বইটি নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে ফেলেন

চাঁদের পাহাড় বই ডাউনলোড

people search also: চাঁদের পাহাড় pdf . চাঁদের পাহাড় pdf boi. চাঁদের পাহাড় pdf download