লােককথা কিলােককথা কি

লােককথা কি লোক কথা কাকে বলে?

লোক কথার সংজ্ঞা

লােককথা বা লােককাহিনীর সংজ্ঞা পুরুষ পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ও গদ্যে বর্ণিত জনশ্রুতিমূলক গল্পকে লােককথা বা লােককাহিনী (Folktate) বলা হয়। মূলত লােককাহিনী সৃষ্টি হয় নিরক্ষর মানুষের মুখে মুখে। লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ার পর বিশ্বের প্রায় সব দেশের গবেষকরাই লােককাহিনীর লিখিতরূপ সংরক্ষণে ব্রতী হয়েছেন। লােককাহিনীতে থাকে লােকচিত্তের মনােরঞ্জন ক্ষমতা, বিস্তৃতকালের স্মৃতিচিহ্নলিখিতরূপে তাকে সৃষ্টি করা যায় না। মুহম্মদ আবদুল হাফিজ লােককাহিনীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-

কিংবদন্তি অর্থ কি? কিংবদন্তি মানে কি

লােককথা কি লােককাহিনী বলতে শুধু সেইসব কাহিনীকে বুঝানাে হয়েছে যা গদ্যে বিধৃত কিন্তু লিখিত বা অলিখিত ঐতিহ্যের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে হস্তান্তরিত হয়ে এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষ পৌছেছে। অর্থাৎ লােককাহিনী বলতে পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে যে তা পুরুষ পরম্পরাক্রমে প্রাপ্ত সম্পদ এবং লিখিত বা মৌখিক গদ্যের ভাষায় তা প্রকাশ ৪২২ করা হয়। গাল্পিক, কথক অথবা শ্রুতিনির্ভর মানুষের বাচনিক মহিমার ওপর লােককথার পরমায়ু নির্ভর করে। বস্তুত, লােককাহিনী হচ্ছে—

It is traditional it is handed down from one person to another, and there is no virture is no virtue in originality, this tradition may be purely oral. বিশ্বজনীনতা লােককাহিনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ।

লােককথার শ্রেণিকরণ

লােককথাকে একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণিতে ধারণ করা দুরূহ। কারণ প্রকৃতিগত দিক থেকে লােককাহিনী বহু বিচিত্রতার অনুষঙ্গী। অধিকাংশ লােককাহিনীই সৃষ্টি হয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ কাঠামাের ভেতর থেকে, যেখানে সামাজিক অবকাঠামাে লােকায়ত জীবনের ঘনিষ্ঠ সংলগ্নতায় গড়ে ওঠে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আশা- ভালােবাসা, চাওয়া-পাওয়া, আবেগ-অনুভূতি, বিস্ময়-ব্যাকুলতা, অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞান, ভয়-ভীতি, স্বপ্ন-বাস্তবতা, রীতি-নীতি, আচার-বিচার, হাসি-কান্নার ছোঁয়া দিয়ে লােককাহিনীর জগৎ নির্মিত।

সেই জগতের অনেক কিছুতেই আমাদের সচেতন মনের জিজ্ঞাসা জবাব খুঁজে পাই না। অনেক লােককাহিনীর অলীক-শিক্ষিত মন ও যুক্তিবােধ । ঘটনার পারম্পর্য আর বাস্তবতার পরাকাষ্ঠে যুক্তিবাদী মন সবকিছুরই বােধগম্য ব্যাখ্যা খোঁজে। কিন্তু এখনও নিরেট যুক্তির নিরিখে মানুষ সবকিছুর বুদ্ধিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা মেলাতে পারেনি। আমাদের অনেক পাওয়াই তাে আজও অবচেতন মনের উৎসব থেকে আসে। চেতন-অবচেতনের মায়াজালে আচ্ছন্ন এই জীবন নিয়েই লােককাহিনীর নানা রঙের আয়ােজন।

লােকসঙ্গীত কাকে বলে ? লােকসঙ্গীত কি?

লােককাহিনীতে যত বৈচিত্র্যময় রসের ছড়াছড়ি, লােকসাহিত্যের অন্য কোনাে শাখায় তা পাওয়া যায় না। আবার লােককথার সবগুলাে শাখাই নিরঙ্কুশ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়। একটি শ্রেণির সঙ্গে অন্য একটি শ্রেণির চরিত্রগত সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে তাই লােককাহিনীর বিভাগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্ভবত এই কারণেই লােককাহিনীর শ্রেণিকরণে প্রত্যেকটি গবেষকই আলাদা আলাদা সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন।

ড. মযহারুল ইসলাম লােককাহিনীকে সর্বমােট ১৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথা:

১. পৌরাণিক লােককাহিনী বা

2.পুরাকাহিনী কিংবদন্তি

৩ রূপকথা বা রূপকাহিনী

৪ পরীকথা

৫ নীতিবাচক লােককাহিনী বা উপকথা অথবা উপকাহিনী *

৬.প্রাণিবাচক লােককাহিনী বা প্রাণিকাহিনী অথবা পশুকাহিনী।

৭. ভৌতিক কাহিনী

৮. বােবাদের লােককাহিনী

৯.হাস্যকৌতুকময় লােককাহিনী

১০. সাংসারিক লােককাহিনী

১১. শিকলি কাহিনী ব্রতকথা

১৩. লােকগল্প

১৪. সত্য ঘটনাশ্রয়ী ক্ষুদ্র কাহিনী বা অ্যানেকডটস।