রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী

‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকটির কাহিনী

‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ মুনীর চৌধুরীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটক এবং বাংলা নাট্যসাহিত্যে একটি উল্লেখযােগ্য শিল্পসফল প্রয়াস। ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রচিত হয় ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের পটভূমি। এই পানিপথের প্রান্তরে ভারতের তিনটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম যুদ্ধটি সংঘটিত হয় বাবুরের সঙ্গে সুলতান ইব্রাহীম লােদীর ১৫২৬ সালে। দ্বিতীয় যুদ্ধটি সংঘটিত হয় মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে হিমুর ১৫৫৬ সালে। তৃতীয় যুদ্ধটি শুরু হয় কাবুল অধিপতি আহমদ শাহ আবদালীর সঙ্গে নব প্রতিষ্ঠিত মারাঠা শক্তির। পানিপথের এই তৃতীয় সংঘর্ষকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’।

সংক্ষেপে ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকটির কাহিনী এরূপ-

পানিপথ প্রান্তরে মুসলিম শক্তি ও মারাঠা শক্তি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য দুর্গ স্থাপন করে প্রতীক্ষা করছে। মুসলিম শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে আহমদ শাহ্ আবদালী,অপরদিকে মারাঠা শক্তির অধিনায়ক হচ্ছে ইব্রাহিম কার্দি। কার্দি এক সময়ে ফরাসীদের কাছে আধুনিক রণবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেও ঘটনাচক্রে ভারতের কোন মুসলিম রাষ্ট্রপতিদের অধীনে চাকুরী না পেয়ে বাধ্য হয়েই মারাঠাধিপতি পেশােয়ার অধীনে চাকুরী গ্রহণ করে এবং নিজ কর্মদক্ষতায় সৈন্যাধিক পদে অধিষ্ঠিত হয়। ইব্রাহীম কার্দির স্ত্রীর নাম জোহরা বেগম। জোহরার পিতা মেহেদী বেগকে মারাঠাগণ হত্যা করেছিল। তাই তার প্রতিশােধের উদ্দেশ্যে সে
মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী স্বামীর প্রতি হীন অপবাদ আরােপ করে গৃহত্যাগ করেছে এবং পিতৃহন্তা মারাঠাদের বিপক্ষে আবদালীর সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যােগ দিয়েছে। এই বীরাঙ্গনা জোহরা বেগমই ছদ্মবেশধারী মন্নু বেগ।‌ পানিপথ প্রান্তরে যখন মুসলিম ও মারাঠারা মুখােমুখি, তখন জোহরা বেগম ছদ্মবেশে মারাঠা কন্যা হিরণবালার সহযােগিতায় স্বামীর কাছে আসে এবং তাকে মারাঠা-পক্ষ ত্যাগ করতে অনুরােধ করে। কিন্তু‌, দৃঢ়চেতা কার্দি বলে :

আরো পড়ুন:

বিশ্বের সেরা ১০ ফুটবলার সম্পর্কে জেনে নিন

 ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকটির পিডিএফ 
যে ফিরে যাবে সে আমি হবাে না। সে হবে বিশ্বাসঘাতক। সে হবে ইব্রাহীম কার্দির লাশ।… ভারতে মুসলিম শক্তি জয়যুক্ত হােক, তার পূর্বগৌরব সে ফিরে পাক-বিশ্বাস করাে এ কামনা আমার মনে অহরহ জ্বলছে। কিন্তু ভাগ্য আমাকে প্রতারিত করেছে। সে গৌরবে অংশগ্রহণের অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমার সঙ্কটের দিনে যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, সে মারাঠাদের বিপদের দিনে আমি চুপ করে বসে থাকবাে? পদত্যাগ করবাে? দলত্যাগ করবাে? সে হয় না জোহরা। আমি নিশ্চিত জানি, জয়-পরাজয় যাই আসুক, মৃত্যু আমার মুক্তির অন্য কোনও পথ নেই ।

(১ম অঙ্ক, ২য় দৃশ্য)

জোহরা বেগম ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। নির্দিষ্ট দিনে শুরু হয় মারাঠা ও মুসলিম বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ। যুদ্ধে উভয়পক্ষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে মুসলিম বাহিনীর জয় হয়। ইব্রাহীম কাদি গুরুতররূপে আহতাবস্থায় মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দি হয় এবং কারাগারে জোহরার সঙ্গে পুনর্মিলনের আগেই আততায়ীর হাতে নিহত হয়। জোহরার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ শূন্যতা। এখানেই নাটকের যবনিকাপাত হয়েছে।

নাট্যকার ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’কে বিশ্লেষণ করে একে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও হিন্দু-মুসলমান উভয় পক্ষের অপরিসীম ক্ষয়ক্ষতির রক্তাক্ত আলেখ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।