বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি

বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি

বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি: বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের একটি ছােট দেশ। এ দেশটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসক দ্বারা শাসিত ও শােষিত হয়েছে। অবশেষে ১৯৭১ সালে এ দেশটি নয় মাসের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় একটি লাল-সবুজের পতাকা খচিত দেশ। তবে বর্তমান বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বাংলা ভাষাভাষী

জনগােষ্ঠি অধ্যুষিত বিস্তৃত জনপদের একটি অংশমাত্র। বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সবখানে, আসামের অন্তর্গত কাছাড় ও গােয়ালপাড়া, বিহারের অন্তর্গত পূর্ণিয়া, সিংভূম ও সাঁওতালের কতকাংশ, উড়িষ্যা ও ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশে এবং মায়ানমারের আরাকানে বাংলা ভাষাভাষী লােকের বসবাস। প্রাচীনকালে এ অঞ্চলের কোনাে নির্দিষ্ট নাম ছিল না। বৃহৎ বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ়, সূক্ষ, হরিকেল, সমতট, চন্দ্রদ্বীপ, তাম্রলিপ্তি, কামরূপ, বরেন্দ্র প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। সপ্তম শতাব্দিতে বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম রাজা শশাংক এই জনপদ গুলিকে গৌড় নামে একত্রিত করেন। এর পর বঙ্গদেশ পুভ্র, গৌড় ও বঙ্গ এই তিন নামে বিভক্ত হয়ে যায়। মুসলমান আমলে এসব জনপদ একত্রে বাংলা অথবা বাঙালা নামে সর্বপ্রথম পরিচিত হয়।

বঙ্গ নামের উৎপত্তি

বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারাে কারাে মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতে বং নামের এক জনগােষ্ঠি এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বংশ বলা হতাে। তাই নদী মেঘলা ও জলমগ্ন দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গ নামে অভিহিত হয়ে আসছে। অনেক হিন্দু ঐতিহাসিক মহাভারত, পুরাণ, হরিবংশ প্রভৃতি ধর্মশাস্ত্রের ভিত্তিতে উল্লেখ করেছেন যে, বলী রাজার ৫ জন সন্তান ছিল। যাদের নাম রাখা হয় :

(১) অঙ্গ;

(২) বঙ্গ;

(৩) কলিঙ্গ;

(৪) পুন্ড্র ও

(৫) সূহ্ম।

বলিরাজ এদেরকে ৫টি রাজ্য দেন এবং যে যে রাজ্যের সিংহাসনে আরােহণ করেন তার নামানুসারে সে রাজ্যের নামকরণ হয়। এদের মধ্যে বঙ্গ এর অধিকারভুক্ত দেশই বঙ্গ নামে পরিচিতি হয়। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন “ব্রাত্যজনের চরিত্র হরণের জন্য এটি একটা চিত্তাকর্ষক ব্রাহ্মণ্য প্রচার”। অপরদিকে, মুসলমানদের পুরাণ কাহিনী অনুসারে হযরত নূহ (আঃ)-এর এক পুত্রের নাম ছিল হাম, তার পুত্র হিন্দ,

👉 আরোও পড়ুনঃ ইন্টারনেট মার্কেটিং কি এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং কাকে বলে

 👉 আরোও পড়ুনঃ   অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যায় ২০২২

👉 আরোও পড়ুনঃ রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনী

👉 আরোও পড়ুনঃ  অনলাইন থেকে ইনকামের সেরা উপায় জেনে নিন?

 

আর হিন্দ এর দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল বং।” বং ও তার সন্তান সন্ততিগণ যে অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করেন, সেই অঞ্চলই কালক্রমে বঙ্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। তাছাড়া কোনাে কোনাে ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, বাংলাদেশের আদিমতম জনগােষ্ঠি সাঁওতাল, কোল ও মুন্ডাদের এক দেবতার নাম হলাে ‘বােঙ্গা’। এই বােঙ্গা থেকেও বঙ্গ নামের উৎপত্তি হতে পারে।

খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে ঋগ্বেদে ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ নেই। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে মুনি কর্তৃক রচিত ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে বঙ্গ নামের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সুপ্রাচীন বঙ্গ দেশের সীমা সম্পর্কে ড. নীহাররঞ্জন রায় বাঙালির ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন, উত্তরে হিমালয় এবং হিমালয় হতে নেপাল, সিকিম ও ভুটান রাজ্য, উত্তর-পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্রের উপত্যকা, উত্তর-পশ্চিম দিকে দ্বারভঙ্গ পর্যন্ত ভাগীরথীর উত্তর সমান্তরালবর্তী সমভূমি, পূর্ব দিকে গারাে খাসিয়া জয়ন্তিয়া, ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম শৈলশ্রেণি বেয়ে দক্ষিণ সমুদ্র পর্যন্ত; পশ্চিমে রাজমহল সঁওতাল পরগনা, ছােটনাগপুর, মানভূম ধলভূম, কেয়ঞ্জর, ময়ূরভঞ্জের শৈলময় অরণ্যময় মালভূমি, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এই প্রাকৃতিক শিলা বিধৃত ভূখণ্ডের মধ্যেই প্রাচীন বাংলার গৌড়-পুণ্ড্র- বরেন্দ্রীয়-রাঢ়-সূহ্ম-তাম্রলিপ্তি- বঙ্গ-বঙ্গাল-হরিকেল প্রভৃতি জনপদ।”

সপ্তম শতাব্দিতে বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা শশাংক এই জনপদগুলােকে গৌড় নামে একত্রিত করেন। এরপর বঙ্গদেশ পুন্ড্র, গৌড় ও বঙ্গ এই তিন জনপদে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মুসলিম ইতিহাসবিদ মিনহাজ-ই-সিরাজ ‘মুসলমানদের বাংলা বিজয়ের ইতিহাস’ গ্রন্থে বরেন্দ্র-রাঢ় এবং বঙ্গ নামে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। তার লেখাতে লখনৌতি ও বঙ্গকে পৃথক অঞ্চল হিসেবে পাওয়া যায়। বঙ্গের সাথে সমতট এর উল্লেখও তাঁর লেখাতে আছে। ইতিহাসবিদ শামস-ই-সিরাজ আফিফের তারিখ-ই-ফিরােজশাহিতে বঙ্গ ও বাঙাল-কে পৃথক অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শামস-ই-সিরাজ সুলতান শামস উদ্দীন ইলিয়াস শাহকে শাহ-ই-বাঙালা রূপে আখ্যায়িত করেছেন। ইতিহাসে মুসলমান শাসক হিসেবে তিনিই সর্বপ্রথম বাংলার সমগ্র ভূখণ্ডে দীর্ঘকাল শাসন করেছেন।

সম্রাট আকবর-এর শাসনামলে সমগ্র বঙ্গদেশ ‘সুবহ-ই-বঙ্গালহ’ নামে পরিচিত হয়েছিল। বাঙালা নামটি মুসলমান শাসকদের সৃষ্টি।

সুতরাং ফারসি বঙ্গালহ শব্দ থেকে পর্তুগীজ Bengala এবং ইংরেজি Bengal শব্দ এসেছে। পরবর্তীকালে বাঙালা কিংবা বাংলা যা ব্রিটিশ শাসকগণ ইংরেজি ভাষায় বেঙ্গাল (Bengal) এবং ভাষাকে বেঙ্গালী (Bengali) বলেই প্রায় দু’শ বছর চালিয়েছে।

তথ্যসূত্র
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস – সালাম, নাসির, নজরুল

[★★★]  ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ইনকাম করার ৫ টি উপা  

[★★★]  বুদ্ধদেব বসুর জীবনবৃত্তান্ত ও সাহিত্যকর্ম

[★★★]  বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব-কারা

[★★★] মুনীর চৌধুরীর কে এবং সাহিত্য জীবন