বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী

অনেকেই বাংলাদেশের রুপকার,মুক্তিযুদ্ধের নায়ক,অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে চান। আমি মনে করি তিনি কেমন রাজনীতি প্রিয় এক জন মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই না পড়লে বুঝবেন না। এই বই টি পড়ার আগে এই বইয়ের খসড়া পোস্টটি আপনাকে অনেক কিছু বঝতে সহযোগিতা করবে।

শিরোনামাঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf বই রিভিউ


লেখক শেখ মুজিবুর রহমান
ধরন আত্মজীবনী সংকলন
প্রকাশনী দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
প্রকাশকাল জুন ২০১২
প্রচ্ছদ সমর মজুমদার
ভুমিকা বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ তনয়া বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গ্রন্থস্বত্ব জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট ২০১২।
রচনাকাল ১৯৬৬-১৯৬৯ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অভ্যন্তরীণ থাকা অবস্থায়।
পৃষ্ঠা সংখ্য ৩২৯
মূল্য ২২০

 

”তুমি শোক নও শক্তি,
সীমার মাঝে অসীম তুমি,
তুমি বাঙালির চিরমুক্তি।”

লেখক আহমদ ছফা তার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো জমজ শব্দ,একটা আরেকটার পরিপূরক এবং এ দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল -প্রোজ্জল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরে সূচনা করছে ‘।

‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী,
বাংলাদেশের রুপকার,মুক্তিযুদ্ধের নায়ক,অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক রচিত হয়।

আত্মজীবনী   

প্রেক্ষাপট, জন্ম, বংশ, পরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি নানা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া, দুর্ভিক্ষ,‌‌ বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রদেশিক মুসলমান ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি। দেশবিভাগের পরবর্তী থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন,

ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা,যুক্তফ্রন্ট গঠন ও পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমুলক শাসনও প্রসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এইসব বিষয় লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বর্ণনা বিদ্যমান।এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জেল জীবন, পিতা -মাতা, সন্তান -সন্ততি ও সর্বোপরি যার কথা না বললেই নয়,তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুর সর্বংসহা সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর চীন,ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রায় অলংকৃত করেছেন।

‌সারাবিশ্ব যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কবল থেকে মুক্তির আভাস পায় পায় মুহূর্ত ঠিক সেই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশে নতুন সূর্যের উদয়, এক মহান নেতার আবির্ভাব ঘটে। মধুমতী নদীর পাশ্ববর্তী এলাকায় গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ বংশের একটি মধ্যবৃত্ত পরিবারের বঙ্গবন্ধুর জন্ম। তার পিতা শেখ লুৎফর রহমান,মাতা সায়েরা খাতুন। কিন্তু কেউই কি জানত সেই দিনের সেই ছোট খোকা আজ বিশ্ব নন্দিত নেতা হবেন।।কথায় আছে –দিনটা কেমন হবে তা সকালের সূর্য দেখলেই বুঝা যায়।

বঙ্গবন্ধুর ছোটোবেলার সব কথা বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। যেমন পড়াশুনা খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকান্ড লিপ্ত হওয়া। ছোটোবেলায় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং চোখ অপারেশনের পর থেকে চশমা পড়া। জেল জীবনে সহধর্মিণীর সহায়তার কথাও উল্লেখ আছেন। বঙ্গবন্ধুর টাকার প্রয়োজন হলে তিনি তার বাবার কাছে চাইতেন। বইটির শেষ পৃষ্ঠায় উল্লখ আছে-” একদিন_সকালে_আমি_আর_রেণু_বিছানায় _বসে_গল্প_করছিলাম,_হাচু_আর_কামাল_নিচে_বসে_খেলছিলো,_হাচু_মাঝে_মাঝে_খেলা_ফেলে_আমার_কাছে_আসে_আর_আব্বা_আব্বা_বলে_ডাকে,_কামাল_চেয়ে_থাকে,_

একসময়_কালাম_হাসিনাকে_বলে_হাচু_আপা_হাচু_আপা_তোমার_আব্বাকে_একটু_আব্বা_বলি,_আমি_আর_রেণু_দুজনেই_শুনলাম_এবং_আস্তে_আস্তে_উঠে_গিয়ে_বললাম_আমিতো_তোমার_ও_আব্বা। বাঙালির আবেগের জায়গায় হল বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু, সেই বঙ্গবন্ধুকে তার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে।অসমাপ্ত আত্মজীবনী যারা পড়েছেন আর এমন নিষ্ঠুর, নিদারুণ কথা পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখের কোণে অশ্রু জমেনি এমন সংখ্যা নেহাৎ নগন্য।

*** বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী  বিশেষ উক্তিসমূহঃ

১.যারা_কাজ_করে_তাদেরই_ভুল_হতে_পারে, যারা_কাজ_করেনা_তাদের_ভুলও_হয়না। (পৃষ্ঠা- ৮০)
২.নেতারা_যদি_নেতৃত্ব_দিতে_ভুল_করে,জনগণকে_তার_খেসারত_দিতে_হয়। (পৃষ্ঠা- ৭৯)
৩.আমার_নিজেরও_একটা_দোষ_ছিলো, আমি_হঠাৎ_রাগ_করে_ফেলতাম। তবে_রাগ_আমার বেশি_সময়_থাকতো_না।(পৃষ্ঠা -৮০)
৪.যে ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত তাদের মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। আর যারা বাবা মায়ের স্নেহ আর আশীর্বাদ পায় তাদের মতো সৌভাগ্যবান কয়জন!
৫.রাজনৈতিক_কারণে_একজনকে_বিনা_বিচারে_বন্দি_করে_রাখা_আর_তার_আত্মীয়স্বজন_ছেলেমেয়েদের_কাছ_থেকে_দূরে_রাখা_যেন_কতবড়_জঘন্য_কাজ_তা_বুঝবে।মানুষ_স্বার্থের_জন্য_অন্ধ_হয়ে_যায়।(পৃষ্ঠা -২০৯)

***বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন মনীষীদের উক্তিঃ

১.শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছন।(বিবিসি ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫)
২.বঙ্গবন্ধুর_হত্যাকান্ডে_বাংলাদেশই_শুধু_এতিম_হয়নি, বিশ্ববাসী_হারিয়েছে_একজন_মহান_সন্তানকে_জেমসলামন্ড
৩.মুজিব_হত্যার_পর_আর_বাঙালিদের_বিশ্বাস_করা _যায়না,যারা_মুজিবকে_হত্যা_করেছে_তারা_যেকোনো_জঘন্য_কাজ_করতে_পারে।- নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট।
৪.বঙ্গবন্ধু_শেখ_মুজিবুর_রহমান_হচ্ছেন_সমাজতন্ত্র_প্রতিষ্ঠার_সংগ্রামের_প্রথম_শহীদ_তাই_তিনি_অমর_সাদ্দাম_হোসেন।
৫.শেখ_মুজিবের_মৃতুত_বিশ্বের_শোণিত_মানুষ_হারালো_তাদের_মহান_নেতাকে,_আর_আমি_হারালাম_একজন_অকৃত্রিম_বিশাল_হৃদয়ের_বন্ধুকে— ফিদেল কাস্ত্রো।

**বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনঃ

“একজন_মানুষ_হিসাবে_সমগ্র_মানবজাতি_ নিয়েই_আমি_ভাবি একজন_বাঙালি_হিসাবে_যায়_কিছু_বাঙালিদের _সঙ্গে_সম্পর্কিত_তাই_আমাকে_গভীর_ভাবে_ভাবায়। এ-ই_নিরন্তর_সম্প্রীতির_উৎস_ভালোবাসা,অক্ষয়_ভালোবাসা_যে_ভালোবাসা_আমার_রাজনীতি_এবং_অস্তিত্বকেঅর্থবহ_করে_তোলে।”

এ-ই উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্ট যে বঙ্গবন্ধু নিজেকে একাধারে মানুষ এবং তার সঙ্গে বাঙালি হিসাবে আত্মপরিচয় স্বীকৃত দিচ্ছেন। তার কর্মপ্রেরণার উৎস হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বাঙালি এবং মানবসম্প্রদায়ের জন্য তার ভালোবাসা। এ-ই আত্মপরিচয় থেকেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি তার রাজনৈতিক চিন্তাধারার চারটি বৈশিষ্ট্যঃবাঙ্গালি জাতিসত্তা, জনসম্প্রীতি,অসাম্প্রদায়িকতা এবং সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন আন্দোলনের রাজনীতি করেছেন ও দলের গঠন করেছেন, মুক্তির কথা বলেছেন। তিনি লাখ লাখ জনতাকে সংঘবদ্ধ করতেন আন্দোলনে কিন্তু তার লক্ষ ছিলো অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, যাতে গণতান্ত্রিক পন্থার মধ্য দিয়ে জনমত সৃষ্টি করে অধিকার আদায় করা যায় এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা যায়।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ এ-ই ২৩ বছরে তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলন ক্রমাগত বেগমান হয়েছে । বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি হয়ে উঠেন কোটি কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা,একদিকে তার ছিলো অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা, অন্যদিকে অতুলনীয় বাগ্মিতা। এ-ই কারণে সারা বিশ্বে তিনি পোয়েট অব পলেট্রিস নামে অবিহিত। উনার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরিটেজের প্রামাণ্য দলিল হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন – “আমি নিজে কমিউনিস্ট নই, তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করিনা।একে আমি শোষনের যন্ত্র হিসাবে মনে করি।এ-ই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে, ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারেনা।”রাজনীতির কিছু সত্য তিনি অকপটে স্বীকার করেছন যেমন তিনি লিখেছেন, একই দলের লোকের মধ্যে দুশমনি বেশি হয়। এজন্যই বঙ্গবন্ধু একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন-” সবাই পায় সোনার খনি,তেলের খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।”
‌বঙ্গবন্ধুকে একবার সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দূর্বল জিনিস কোনটি,তখন তিনি প্রত্যুত্তোরে বলেছিলেন “আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি আর সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হচ্ছে আমি তাদেরকে খুব ভালোবাসি।

***বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিষয়বস্তু 

বঙ্গবন্ধুর ভাষার -“যুদ্ধের ধ্বংস স্তুপের উপর দিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ” বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’রচনাকালের সময়টা ছিলো বাংলাদেশ তথা সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি সংকটময় ক্রান্তিকাল।স্বাভাবিকভাবেই লেখকের বর্ণনায় সেসময়ের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা অবলীলায়ক্রমেই বইটিতে স্থান পেয়েছে। নিচে অল্প পরিসরে সেসব ঘটনাসমূহের আলোকপাত করা হলঃ
১.দেশভাগঃ
ভারত_বিভাজন_বা_দেশভাগ_হল_ব্রিটিশ_ভারতের_রাজনৈতিক_বিভাজন।১৯৪৭_সালের_১৫_আগস্ট_ব্রিটিশ_ভারত_ভেঙে_পাকিস্তান_অধিরাজ্য_ও_ভারত_অধিরাজ্য_নামে_দুটি_সার্বভৌম_রাষ্ট্র_গঠন_করা_হয়। পাকিস্তান_ভেঙে_পরবর্তীকালে_আবার_পাকিস্তান_ও_বাংলাদেশ_নামে_দুটি_স্বাধীন_রাষ্ট্রের_সৃষ্টি_হয়।

২. বাংলার দুর্ভিক্ষ
এ-ই সময় বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মৃত্যু বরণ করেন।বলা হয়ে থাকে এ-ই দুর্ভিক্ষ বৃটিশ কতৃক সর্ববৃহৎ পরিকল্পিত গণহত্যা। অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে বাঁচার তাগিদে ঘাসপাতা এমনকি মৃত মানুষের মাংস খেয়ে ক্ষুধা নিভৃত করতে হয়েছিলো।বঙ্গবন্ধুর ভাষায়-যুদ্ধ করে ইংরেজরা আর না খেয়ে মরে বাঙালি। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় রচিত অশনি সংকেত অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত এ সেই চিত্র স্পষ্টভাবে
ফুটে ওঠেছে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মেও সেই সময়ের দুর্ভিক্ষের চিত্র ফুটে উঠেছে। দুর্ভিক্ষে বঙ্গবন্ধু একজন মাঠকর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

৩.দ্বিজাতি তত্ত্বঃ-
দ্বিজাতিতত্ত্ব ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ভারতকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত করার নির্ণায়ক ও আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের এ ধারণার উন্মেষ ঘটান। মতবাদটির একটি নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৯০৯, ১৯১৯ ও ১৯৩৫ সালের পর্যায়ক্রমিক সাংবিধানিক সংস্কার আইনের ভিত্তিতে হন্য দেয়া হয়েছে। জিন্নাহ’র এ তত্ত্বে উপর ভিত্তি করেই ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

৪.লাহোর প্রস্তাবঃ-
১৯৪০ খ্রীস্টাব্দের ২৩ মার্চ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলারমূখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ২৪ মার্চ এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এটি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত। এ প্রস্তাবে, ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার জন্য বলা হয়।প্রকৃতপক্ষে, লাহোর প্রস্থাবেই বাঙ্গালির স্বাধীনতার প্রথম বীজ বপন করা ছিলো। কিন্তু তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় মুসলিমলীগ নেতা মুহাম্মদ_আলী_জিন্নাহ মুসলিম অধিকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘এলাকাগুলো’ পরিবর্তন করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘এলাকাটি’ হবে ঘোষণা দিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা বাদ দিয়ে দেন।

৫.হিন্দু মুসলিম দাঙ্গাঃ-
হিন্দু মুসলমানদের দাঙ্গা বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে আবুল মুনসুর আহমেদের আয়না প্রবন্ধে।এ-ই প্রবন্ধের সবগুলো গল্পের মুল বিষয়বস্তু ছিলো হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা।তবে বিশেষ করে ধর্মরাজ্য গল্পে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে।
১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতে আসলে হিন্দুপ্রধান ভারত ও মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেস এ প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। এই_প্রত্যাখ্যানের_বিরুদ্ধে_এবং_একটি_পৃথক_মুসলিম_রাষ্ট্র_গঠনের_দাবিতে_১৯৪৬_সালের_১৬_অগস্ট_তৎকালীন_মুসলিমলীগ_নেতা_মোহাম্মদ_আলী_জিন্নাহ_’ডাইরেক্ট_অ্যাকশন_ডে’_পালনের_ঘোষনা_ দেন।
হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, হাশিম সাহেব আমাদের নিয়ে সভা করলেন। তিনি বললেন, তোমাদের প্রতিটি মহল্লায় যেতে হবে। তোমরা বলবে, আমাদের এই সংগ্রাম হিন্দুদের বিরুদ্ধে নয়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে।

৬.আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনঃ-

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম রাজনৈতিক একটি দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন ঢাকার স্বামীবাগে অবস্থিত ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৫ সালে ঢাকার রুপমহল_সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে_দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি_বাদ দেয়া হয় এবং দেশ স্বাধীন_হওয়ার পর এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান(বঙ্গবন্ধু তখন জেলে বন্দী ছিলেন)

৭.১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনঃ-

১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলা ভাষাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষ ছিল বাংলা ভাষাভাষি। আর বাকি ৪৪ ভাগ উর্দু এবং অন্যান্য ভাষাভাষী। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে বিচার করলে বাংলাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত।
কিন্তু ১৯৪৮ সালের মার্চে জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক ভাষণে বলেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।সেখানে উপস্থিত ছাত্ররা নো নো বলে জিন্নাহর কথার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
যার ফলে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী শিক্ষার্থীরদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দিতে থাকে। উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে এবং এক পর্যায়ে_পুলিশ_গুলি বর্ষণ_করলে সালাম_বরকত_রফিক_জব্বারসহ_আরো নাম না জানা অনেকে_শহীদ হয়।

৮.যুক্তফ্রন্ট গঠনঃ

ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতিয়তাবাদের প্রথম বিজয় সূচিত হয়। ১৯৫৪ সালের এই নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের তদানীন্তন_মুসলিমলীগের_স্বৈরাচারী_শাসনের_বিরুদ্ধে_বাংলার_অধিকার_সচেতন_জনতা_যুক্তফ্রন্টের_নেতৃত্বে_ঐক্যবদ্ধভাবে_আন্দোলন_গড়ে_তোলে_এবং_বাংলার_ইতিহাসে_এক_নতুন_অধ্যায়ের_সূচনা_হয়।
যুক্তফ্রন্টের প্রধান তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সোহরাওয়ার্দী। তারা ২১ দফার একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। ২১ দফার প্রধান দাবি ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা। যুক্তফ্রন্ট_এর নির্বাচনি_প্রতীক_ছিল_নৌকা, যা_পরবর্তীকালে_আওয়ামীলীগ_এর_নির্বাচনী_প্রতীক_হিসেবে_ব্যাবহার_করা_হয়।
নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে। মুসলিম লীগ সম্পূর্ণরূপে পরাভূত হয় (৯টি আসন লাভ করে)।১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠন করে।এই মন্ত্রীসভার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৫৬ দিন।

***সমকালীন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গঃ-

লেখক তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করেছেন, আমি তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করলাম।

১.শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকঃ-
(১৮৭৩-১৯৬২) বাংলার বাঘ নামে খ্যাত এ কে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।কৃষক প্রজা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী তে তাকে হক সাহেব নামে ডাকতেন।তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন গরীবের বন্ধু।

২.মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬)
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাংলায় গ্রামভিত্তিক রাজনীতির প্রবর্তক মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ভারতীয় উপমহাদেশের স্বনামধন্য ধর্মগুরু এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মুসলিম লীগ গঠিত হলে মাওলানা ভাসানী ১৯৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগ দেন।মুসলিম_লীগে_যোগ_দেওয়ার_সাথে_সাথেই_তাকে_আসাম_ইউনিটের_সভাপতির_দায়িত্ব_দেওয়া_হয়।

৩.ধীরেন্দ্রনাথ দত্তঃ-(১৮৮৬-১৯৭১) কুমিল্লার কৃত সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত
আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।বঙ্গীয় বিধানসভার সদস্য।১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।তিনিই প্রথম ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে সমান মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।যদিও এ দাবি প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়।

৪.হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীঃ-
(১৮৯২-১৯৬৩) শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু। পেশায় আইনজীবী ছিলেন তিনি। তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়। অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী(১৯৪৬)।পাশ্চাত্য গনতন্ত্রের একনিষ্ঠ প্রবক্তা। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী তাকে শহীদ সাহেব বলে সম্মোধন করছন এবং তার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলোর ও বর্ণনা করে খুব সাবলীল ভাবে।পুরো বই জুড়েই বঙ্গবন্ধু যার গুনকীর্ত্তণ করেছেন তিনি হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

আপনার জন্যেঃ সিভি লেখার নিখুঁত উপায় 2022

৫.খাজা নাজিমুদ্দিনঃ-(১৮৯৪-১৯৬৪)
ঢাকার নবাব পরিবারে জন্ম।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা করেন। ঢাকায় অবস্থিত তিন নেতার মাজারের মধ্যে তিনিও শায়িত আছেন।

৬.লিয়াকত আলী খানঃ-(১৮৯৬-১৯৫১) ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত মুসলিম রাজনীতিবিদ।নিখিল ভারতের মুসলিম লীগের নেতা হিসাবে রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৫১ সালের ১৬ ই অক্টোবর আততায়ীর হাতে নিহত হন।

৭.সুভাষ চন্দ্র বসুঃ-(১৮৯৭-১৯৪৫) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি নেতা।তিনি নেতাজী নামে খ্যাত। ‘আজাদ হিন্দ’ ফৌজ গঠন করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে মুক্তি সংগ্রাম শুরু করেন।সুভাষচন্দ্র বসু পর পর দুইবার ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন।

৮.আবুল মুনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯)
আবুল মুনসুর একজন সাহিত্যিক,সাংবাদিক , ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি তৎকালীন সমস্যা গুলো ব্যঙ্গরসের মাধ্যমে তুলে ধরতেন এইজন্য তাকে সাহিত্যের ব্যঙ্গরসাত্মকও বলা।উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে ‘আয়না’।এছাড়াও তার রচিত আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর।রাজনৈতিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য গ্রন্থ।

৯.আবদুস সালাম খান (১৯০৬ – ১৯৭২) তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং পূর্ব পাকিস্তান বঙ্গ আই পরিষদের সদস্য । তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থানে জড়িত ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান প্রতিরক্ষা আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।

১০.শামসুল হকঃ-(১৯১৮-১৯৬৫) তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক।তিনি পাকিস্তানের গণ পরিষদের সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে তাকে কারাবন্দি হতে হয় ।বঙ্গবন্ধুর ভাষায় –
যে কয়জন কর্মী সর্বস্ব দিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছে তাদের মধ্যে শামসুল হক সাহেবক অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ।

১১.আনোয়ারা খাতুন(১৯১৯-১৯৮৮)
তিনি ১৯৪৬ সালে তৎকালীন থেকে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন তিনি।
আনোয়ারা খাতুন আলী আমজাদ খানের স্ত্রী। তার স্বামী আওয়ামী লীগেরপ্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন।

১২.তাজউদ্দীন আহমদঃ-(১৯২৫-৭৫)
বাংলাদেশের একমাত্র কুরআনের হাফেজ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ।
মুজিবনগর সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সুদক্ষ ডেপুটি ছিলেন এবং অসময়ের বন্ধু।১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর জেলে তাকেসহ আরো তিন নেতাকে হত্যা করা হয়।এজন্যই ৩ নভেম্বরকে জেল হত্যা দিবস পালন করা হয়।

১৩.মুনীর চৌধুরীঃ-(১৯২৫-৭১)
বাংলাদেশ একজন কিংবদন্তি নাট্যকার, ভাষাতাত্ত্বিক, সমালোচক,সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় তাকে কারাবন্দী হতে হয়।জেলে বসেই তিনি সহবন্দীদের অনুরোধে ‘কবর’ নাটকটি রচনা করেন।নাটকটি জেলেই রাতের অন্ধকারে মঞ্চায়ন করা হয়।

১৪.মহিউদ্দিন আহমেদ (১৯৩৮ – ২০০০) মহিউদ্দীন আহমেদ একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা, যিনি রাজশাহীর মহিউদ্দিন নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এছাড়াও তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেরবামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।

১৫.জওহরলাল নেহেরুঃ-(১৯৮৯-১৯৬৪)
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। আধুনিক ভারতের রুপকার। ১৯২০-২২ সালে অহিংস আন্দোলনের দিনগুলোতে তিনি দুইবার কারাবরণ করেন।পন্ডিত নেহেরু নিখিল ভারতে কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বরে।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখার কারণ

শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। ১৯৬৮-৬৯ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক বন্দি ছিলেন। তার বন্ধু, সহকর্মী এবং স্ত্রীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি এই একাকী সময়ে তার জীবনী লিখতে শুরু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধানমন্ডি রোড নং. ৩২ বছর বয়সী শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পাকিস্তানি হানাদারদের দখলে।

এই বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, ডায়েরি, ভ্রমণ কাহিনীর পাশাপাশি ড্রেসিংরুমের আলমারির অন্যান্য নোটবুক রয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা পুরো বাড়ি লুটপাট ও লুটপাট করলেও কাগজপত্র তার কাছে রেখে দেয়। ১৯৭৫ সালের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জিয়া সরকার বাড়িটি সিলগালা করে দেয়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়।

বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা, ডায়েরি ও ভ্রমণ বই পাওয়া যায়। সময় কিন্তু তার আত্মজীবনী পাওয়া যায়নি; শুধুমাত্র কিছু টুকরো টুকরো টুকরো টুকরো ফাইল-স্কেপ কাগজ পাওয়া যায়। এর কিছুদিন পরে, 2004 সালে, শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাগ্নে শেখ হাসিনার কাছে চারটি পুরানো এবং প্রায় অস্পষ্ট নোটবুক নিয়ে আসেন। তিনি শেখ মুজিবের আরেক ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মানির অফিস ডেস্ক ড্রয়ার থেকে এই চারটি বই সংগ্রহ করেন। এই লেখাগুলো হারিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর উপরোক্ত আত্মজীবনী দ্বারা প্রমাণিত। এগুলো শেখ মণিকে টাইপ করার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এগুলো পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুন মাসে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের আধুরী আত্মজীবনী শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের পক্ষ থেকে বইটি প্রকাশ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী সমর মজুমদার এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং স্ক্যান করেছেন ধনেশ্বর দাস চম্পক।

বইটির বর্ণনাভঙ্গি দেখে যে কেউ খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে বঙ্গবন্ধু কতটা সততা বজায় রেখে একেবারে খোলামেলাভাবে জীবনের স্মৃতি লিপিবদ্ধ করেছেন। সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি বইটির গ্রহণযোগ্যতা ও পড়ার আকাঙ্খা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।এটিকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই বলে নেহাৎ ভুল করবেন না।এটি একজন মহান নেতার আত্মকথন।অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি বঙ্গবন্ধুর অনবদ্য সৃষ্টি।

এটি একটি উচ্চমার্গের সাহিত্যও বটে। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু শব্দ দুটো ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই কোনটিকে বাদ দিয়ে কোনটা জানা সম্ভব নয়, সুতরাং শিখরে পৌঁছাতে হতে শেকড় সম্পর্কে জানতে হবে আগে,আর বাঙালি জাতির শেকড় হচ্ছে অসমাপ্ত আত্মজীবনী। তাই দল, মত নির্বিশেষে সবারই পঠন- পাঠন করা উচিত শুধু পাঠই নয় বিশ্লেষণী পাঠ করতে হবে এবং আত্মোপলব্ধি করতে হবে আমরা বাঙ্গালি জাতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু প্রতি কতটা ঋণী।তাই সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমরা সকলেই প্রতিঙ্গাবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হই সোনার বাংলা বিনির্মাণে। পরিশেষে বলতে চাই, তুমি আছো,থাকবে। সীমাহীন স্বপ্নে, বাঙালির হাসিমুখে।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে কিছু কমন প্রশ্ন ?এবং উত্তর

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কিছু প্রশ্ন সবায় খুজে থাকেন, যে প্রশ্ন গুলো প্রায় প্রতিযোগিতা মূলোক  পরিক্ষায় এসে থাকে ।

১। প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী কয়টি ভাষায় প্রকাশিত হয় ?

উত্তরঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী ১২ টি ভাষায়

২। প্রশ্নঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী কয়টি ভাষায় অনূদিত হয়ঃ

উত্তরঃ  অসমাপ্ত আত্মজীবনী ১১ ভাষায় । এই ভাষা গুলো হলো-

1. ইংরেজি

2. জাপানি

3. চীনা

4.. আরবি

5. ফরাসি

6. হিন্দি

7. তুর্কি

8. স্প্যানিশ

9. উর্দু

10. অসমীয়া

11. নেপালি

৩। প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ইংরেজি অনুবাদ কিরেন কে?

উত্তরঃ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অধ্যাপক ফকরুল আলম

৪। প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশ কাল কখন?

উত্তরঃ ২০১২ সালে ।

৫। প্রশ্নঃ কোন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী তে কোন দেশের ভ্রমণ যাত্রার কথা বলা হয়ছে?

উত্তরঃ চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান

৬। প্রশ্নঃ ​​আরবি ভাষায় অসমাপ্ত আত্মজীবনীকে প্রকাশ করেন?

উত্তরঃ  ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

৭।  প্রশ্নঃ The Unfinished Autobiography এর সম্পাদক কে?

উত্তরঃ শামসুজামান খান, মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমী

৮।প্রশ্নঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রচ্ছদটি কে এঁকেছেন?

উত্তরঃ সমর মজুমদার

৯।প্রশ্নঃ  অসমাপ্ত আত্মজীবনী ভূমিকা কার লেখা?

উত্তরঃ শেখ হাসিনা ওয়াজেদ

১০ । প্রশ্নঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে কত সালের ঘটনা লেখা হয়েছে?

উত্তরঃ 1955 সাল পর্যন্ত।

১১। প্রশ্নঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল ? কোন ভাষায়?

উত্তরঃ 2017 সালে – অসমীয়া ভাষা

১২।প্রশ্নঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রথম লাইন কি ?

উত্তরঃ প্রথম লাইনঃ” বন্ধু বান্ধবরা বলে -“তোমার জীবনী লিখ”।

১৩। প্রশ্নঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনীর শেষ লাইন কি ?

উত্তরঃ  শেষ লাইনঃ”তাতেই আমাদের হয়ে গেলো”

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf বইটি সহজে খুঁজে বা অনলাইনে পড়তে এই লিঙ্ক টি ভিজিট করুণ-

  বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf

বুক রিভিউ লেখিকা : নূরমহল খাতুন (রাণী)